| বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে আয়োজিত আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজের সদস্য ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। বুধবার নতুন বছরের প্রথম দিনে তার সম্পাদিত ডেইলি স্টারের এক মন্তব্য কলামে মাহফুজ আনাম এ আহ্বান জানান। পাঠকদের জন্য মাহফুজ আনামের সেই কলামটির অনুবাদ তুলে ধরা হলো:
গত ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ‘দয়া করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করবেন না’ শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। সেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করা উচিত না, এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আজকে আমরা নতুন বছরের নতুন আশায়, অব্যাহত রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ভয়াবহ সহিংসতা ও প্রাণহানির আশংকায় আবারো আমাদের আবেদনের পুনরাবৃত্তি করছি ।
কারণ সংবিধানের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি ভোটারদের আস্থা তৈরি এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা আমাদের দায়িত্ব। তাছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে তা অব্যাহত থাকলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশের অর্থনীতি।
গত শুক্রবারের আবেদনে আমরা যেসব দিক তুলে ধরে ছিলাম তা হলো:
১. নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীন দলের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত করা উচিত। কারণ আইন অনুযায়ী পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই এই নির্বাচন করা সম্ভব।
২. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম সংসদের অধিবেশন আহ্বান করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারেন যাতে তার নেতৃত্বে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা খুঁজে বের করা যায়।
৩. যদি নবম সংসদের অধিবেশন আহ্বান করা হয় তবে বিএনপির উচিত হবে কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই সংসদে যোগ দেয়া এবং হরতাল, অবরোধের মতো সবধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সমঝোতা প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া উচিত।
৪. জামায়াতের অংশগ্রহণের ব্যাপারটি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।
কেন আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী এগুলো বিবেচনা করবেন এর জবাবে কিছু কারণ তুলে ধরছি:
১. ১৫৩ আসনে কোনো ভোট গ্রহণ ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ১৪৬ আসনে নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী সংসদ সদস্যদের জন্য গঠিত সংসদ কখনোই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের মতো বৈধতা দাবি করতে পারে না। কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার শুধু তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আর খ্যাতি হারাতে পারে।
২. সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, নির্বাচন হলো জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন যা প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে হতে হবে। অথচ এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত।
৩. নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং আসংবিধানিক উপায় প্রতিরোধ করার যে যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে এসবই দুর্বল ভাবনা ছাড়া আর কিছুই না। এসব ভাবনা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া নির্বাচন স্থগিত করে ৯ম সংসদ অধিবেশনের আহ্বান করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আইনগতভাবেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।
৪. তাছাড়া ভোটারবিহীন এই নির্বাচন হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে এবং এরফলে দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
Posted ১৪:০৪ | বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin