| রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি : দেশে কোন বিরোধী দল নেই উল্লেখ করে ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, পার্লামেন্টে ওপোজিশন বলতে কিছু নাই। যে ওপোজিশন বলা হচ্ছে তা সরকারের সৃষ্ট। তারা দুই জায়গায়ই থাকতে চায়।
রবিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। পত্রিকা বন্ধ করা মধ্যযুগীয় ফর্মূলা উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ইনকিলাব যে সংবাদ পরিবেশন করেছে তা একদম রেসপনসিবিলিটি (দায়িত্ব) ছাড়া ছাপিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে পত্রিকাটি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু সরকার যেভাবে পত্রিকাটির অফিস বন্ধ করে দিলো এটা আমি সমর্থন করতে পারি না। উদারণ স্বরুপ বলতে পারি, ধরুন কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে তাহলে কি আপনি তার জিহবা কেটে দিবেন, অথবা গলা কেটে দেবেন? দেখুন যেখানে স্বাধীনতা রয়েছে সেখানে তা লঙ্ঘনের প্রবণতাও থাকে। এভাবে একটা কাগজকে মেরে ফেলা এটা মধ্যযুগীয় ফর্মূলা।
তিনি বলেন, এমনিতে ইনকিলাবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনগতভাবে যত ধরণের শাস্তিই দেওয়া হোক তা মেনে নিতে আমি রাজি আছি। তাদের প্রাপ্য শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু যেভাবে প্রেস সিলগালা করে দিল তাতে যথাযথ প্রক্রিয়া মানা হয়নি।
সরকারে গনমাধ্যম বন্ধের সমালোচনা করে ডেইলী স্টার সম্পাদক বলেন, সরকারের গণমাধ্যম বন্ধের প্রবণতা দূর হওয়া উচিত। সরকার বলে পত্রিকা বন্ধ করিনি কিন্তু পত্রিকার প্রেসে তালা লাগিয়ে দেয়। এসরকারের সময় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সম্প্রচার কমিশন গঠন প্রসংগে এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আনাম বলেন, আমি সবসময়ই সরকারের দ্বারা নজরদারিতাকে ভয় পাই।
তিনি বলেন, সরকার একচুয়্যালি প্রেস ফ্রিডম বা ব্যক্তি স্বাধীনভাবে বলার অধিকারের পক্ষে কাজ করছে তখন দৃষ্টিভঙ্গি একরকম। আবার আপনি যদি কারো মতের বিরোধী কথা বলেন তাহলে বলা হবে আপনি দালাল হয়ে গেছেন, আপনি অমুক দলের হয়ে কথা বলছেন তখন সেটা আরেক রকম। এই স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যদি এরকম লেভেলিং হয় সেটাও কিন্তু একধরনের নিয়ন্ত্রণ।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রসঙ্গে মাহফুজ আনাম বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উনার সীমাহীন ক্ষমতা। উনাকে প্রশ্ন করার কোন প্রতিষ্ঠান নাই। এটা উনার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত পজিটিভ এটিচিউড নিয়ে বলছি, উনি কার কাছে দায়বদ্ধ? হয়তো উনি বলবেন উনি জনগনের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু আমি, আপনি সবাই জানি এটা স্রেফ নিরর্থক একটা বক্তব্য।
মাহফুজ আনাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা এটাকে ডেমোক্রেসিতে বলে চেক এন্ড ব্যালেন্স। চেক এন্ড ব্যালেন্স হচ্ছে সাকসেসফুল গর্ভনেন্সের মূলমন্ত্র। আপনি দেখেন ওবামার মত একজন পাওয়ারফুল প্রেসিডেন্ট। তিনি একজন অ্যামবাসেডর নিয়োগ দিতে হলেও কংগ্রেসের দ্বারস্থ হতে হয়। কিছুদিন আগে দেখলাম যে ডেভিড ক্যামেরন সিরিয়া যুদ্ধে ইনভলভ হতে চেয়েছিলেন কিন্তু পার্লামেন্ট তাকে দেয় নাই। আর এই যে একজনের ক্ষমতা আরেকজনের দ্বারা চেক করা। এটার মাধ্যমেই কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ সু-শাসনের দিকে যায়।
তিনি বলেন, আমাদের ছোট থেকে বড় সমস্ত সরকারি ইন্সটিটিউশন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। আপনি জুডিশিয়ালের দিকে তাকান। আপনি দুর্নীতি দমন কমিশনের দিকে তাকান, দেখেন এখানেতো আইন করে বলা হয়েছে সরকারী কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে। কেন? পৃথিবীর কোন এন্টি করাপশন কমিশনে এমনটি আছে? তারাতো প্রয়োজনে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও মামলা করে।
মাহফুজ আনাম বলেন, পৃথিবীতে দুই ধরনের রাষ্ট্র রয়েছে। একটা হলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক আরেকটা হলো ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রীক। আমাদের দেশ হলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক। যে সব রাষ্ট্র ইন্সটিটিউশন কেন্দ্রীক তাদের টেকশই বেশি দিনের হয় আর সেসব রাষ্ট্র এগিয়ে যায়। আর যেসব দেশ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায় সে সব দেশে ঐ ব্যক্তি যখন চলে যায় তখন তা ধপাস করে পড়ে যায়। আমাদের দেশে কিন্তু কোন ইন্সটিটিউশন গ্রো (তৈরি হওয়া) করে না।
Posted ১৯:৫২ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin