| বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮ | প্রিন্ট
ডেস্ক রিপোর্ট: সহসাই কমছে না ব্যাংক ঋণের সুদের হার। বরং অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত গ্রাহকদের দফায় দফায় সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। গ্রাহকভেদে এই হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে যা প্রকৃত অর্থে ১৮ থেকে ২০ শতাংশে গিয়ে স্থির হয়।
সত্য ও প্রকৃত উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ গ্রহিতারা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী সুদ মওকুফ করিয়ে নিচ্ছে। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের পছন্দের ব্যক্তিরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। আবার ব্যাংক মালিকরাও সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, নিচ্ছেন। সুদের হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব সুবিধা নিলেও উল্টো সুদের হার বাড়ছে। ঢালাও সুদের হার বাড়াতে গিয়ে এখন ব্যাংকিং খাতে নতুন এক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসা সুদের হার এক ঘোষণায় বাড়িয়ে দিয়ে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির তৈরি করা হয়েছে। যা আর্থিক খাতের জন্য মোটেই শুভ নয় বলে জানিয়েছেন সূত্রগুলো।
বেশি সুদের ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের করুণ অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত বেশি সুদ দিয়ে কোনো ব্যবসাতেই টিকে থাকা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করার ব্যাংকগুলো কম সুদে ঋণ দিতে পারছে না। নানা কারণে ব্যবসা পরিচালনা করা এখন কঠিন, এর উপরে সুদের হার ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। সুদের হার এত বেশি থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
এ বিষয়ে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ বলেন, দুই অংকের সুদে আমানত নিয়ে কোনো ব্যাংকই এক অঙ্কের সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। আর বেশি সুদের ঋণ নিয়ে ব্যবসায় লাভ করে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়াও প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন এ ব্যাংকার।
মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল আযম বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামতে একটু সময় লাগতে পারে। নগদ টাকার সঙ্কট কাটলেই ধীরে ধীরে সুদের হারও নেমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
সূত্রমতে, ফারমার্স ব্যাংক সচল রাখতে সরকারের কয়েকটি ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। এই অর্থ আপাতদৃষ্টিতে ঐ ৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিলেও কার্যত: টাকা যাচ্ছে ঋণ গ্রহিতাদের পকেট থেকে। সুদের হার বাড়িয়ে ব্যাংকগুলো সেটা পুষিয়ে নিচ্ছে। যার ক্ষতিকর প্রভাবে অনেক উদ্যোক্তার ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার শংকা তৈরি হয়েছে। আর তা যদি হয়, তবে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে কয়েক লাখের। যা উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে নতুন ‘ক্ষত’ তৈরি করবে।
বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের এই সময়ে সুদের হার বৃদ্ধি উত্পাদনমুখী খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নতুন করে খেলাপি হওয়ার শংকা বেড়েছে। এত বেশি হারে সুদ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা লাভজনক তো নয়ই, বরং দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ ব্যাংক মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বেশ কিছু সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু সুদের হার কমায়নি। বরং সহসা কমানো যাবে না বলে জানিয়েছেন কর্তাব্যক্তিরা। তারা বলছেন, বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করায় সহসাই সুদের হার কমানো যাচ্ছে না।
ব্যাংকিং খাতের তারল্য সঙ্কট (নগদ টাকার সঙ্কট) উত্তরণ করে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে চার ধরনের সুবিধা নিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চাহিদা অনুযায়ী যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, সিআরআর এক শতাংশ কমানো, ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এসব সুবিধা নেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সুদের হার আগের জায়গাতেই আছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ছে। কবে সুদের হার কমবে সে বিষয়ে এখনো কেউই নিশ্চিত করতে পারছে না।
এদিকে, ৯০ দিনে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ২৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করেছে ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০৭ কোটি টাকাই চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। বাকি ৭২৬ কোটি টাকা ২৩ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের। এই সুবিধাও প্রকারান্তরে প্রভাবশালীরা পেয়েছেন। প্রভাব খাটিয়ে কিংবা ব্যাংকারদের পছন্দের কোম্পানিকে সুদ মওকুফের এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যৌক্তিক কারণে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কেউই এই সুবিধার আওতায় নেই। শোনা যায় যে, ব্যাংকারদের কিছু ‘কমিশন’ দিয়েও সুদ মওকুফ করা যায়। আর এ কারণে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ঋণ পরিশোধের প্রবণতাও কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সুদ মওকুফ করেছে ১০১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক সুদ মওকুফ করেছে ৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক ৩৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ১৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ১ কোটি ২২ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করেছে। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আলোচ্য সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক ৫৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩০ কোটি ৭৩ লাখ, সাউথইস্ট ব্যাংক ১১ কোটি ৩২ লাখ, প্রাইম ব্যাংক ১৭ কোটি ৩৭ লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১০ কোটি ৩৮ লাখ, যমুনা ব্যাংক ১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে। সূত্র: ইত্তেফাক
[সুদের হার না বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ :পৃষ্ঠা ১৮]
Posted ১২:৫৬ | বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain