নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
লন্ডন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবীতে লন্ডনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে । পাঠকদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকে‘র সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য হুবহুব তুলে ধরা হল ।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা যারা আজকে আমাদের আহ্ববানে এখানে এসেছেন আমাদের পক্ক থেকে প্রথমে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্টার মাধ্যমে সুখী, সমৃদ্ধশালী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দেওয়া সম্ভব বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
আপনারা জানেন যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মধ্যরাতের সরকার মধ্যযুগীয় কায়দায় জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে দেশে চরম দূঃশাসন, গণতন্ত্রহীনতা, দুর্নীতি-লুটপাট, চরম অনিয়ম, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিচারহীনতা সহ সব ধরণের অব্যবস্থাপনা চরম ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ও প্রতিষ্ঠানসমূহে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বাধার ফলে জনগণ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ভুগছে।
অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ এখন দুর্নীতি, মানবাধিকার লংঘন ও অবিচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের ছাড়া আর কারো জীবন নিরাপদ নয়। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার তাদের অন্যায় অবিচার ও দুর্নীতির সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। কেউ এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করলে বা কথা বললে তাদেরকে তখন সব ধরনের হয়রানি জেল-জুলুম, অপহরণ জীবনহানি বিচারবহির্ভূত হত্যার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ প্রদান ও একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দেওয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্যে দোয়া কামনায় আজকের সংবাদ সম্মেলন/ প্রেস ব্রিফিং।
বর্তমান ফ্যাসিবাদী এবং অগণতান্ত্রিক সরকারের বিভিন্ন নিষ্ঠুর ও পাশবিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হবো যদি আপনারা দয়া করে এবং আগ্রহ সহকারে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে যে কোন সঠিক পদক্ষেপ নেন তাতে গোটা দেশ ও দেশের জনগণ উপকৃত হবে ।
আপনারা জানেন, বেগম খালেদা জিয়া যিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি,এন,পি)র চেয়ারপারসন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, পাঁচ পাঁচটি আসনে যিনি বার বার নির্বাচিত হয়েছেন, তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় জেল দণ্ড দিয়ে বর্তমান অবৈধ সরকার গৃহবন্দী করে রেখেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সুচিকিৎসার অভাবে তিনি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছেন। অনেক চেষ্টা-তদবীর করেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদন বর্তমান দুর্নীতিবাজ সরকার অগ্রাহ্য করছে।
আইনমন্ত্রী একজন আইনজীবী হয়েও আইনের ভুল তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করছেন, নিম্নে CrPC Section 401 ধারা তুলে ধরা হলো:
The Code of Criminal Procedure, 1898
401.(1) When any person has been sentenced to punishment for an offense, the Government may at any time without conditions or upon any conditions which the person sentenced accepts, suspend the execution of his sentence or remit the whole or any part of the punishment to which he has been sentenced.
(2) Whenever an application is made to the Government for the suspension or remission of a sentence, the Government, may require the presiding Judge of the Court before or by which the conviction was had or confirmed to state his opinion as to whether the application should be granted or refused, together with his reasons for such opinion and also to forward with the statement of such opinion a certified copy of the record of the trial or such record thereof as exists.
(3) If any condition on which a sentence has been suspended or remitted is, in the opinion of the Government not fulfilled, the Government may cancel the suspension or remission, and thereupon the person in whose favor the sentence has been suspended or remitted may, if at large, be arrested by any police-officer without a warrant and remanded to undergo the unexpired portion of the sentence.
(4) The condition on which a sentence is suspended or remitted under this section may be fulfilled by the person in whose favor the sentence is suspended or remitted, or one independent of his will.
(4A) The provision of the above sub-sections shall also apply to any order passed by a Criminal Court under any section of this Code or of any other law, which restricts the liberty of any person or impose any liability upon him or his property.
(5) Nothing herein contained shall be deemed to interfere with the right of the President 1[* * *] to grant pardons, reprieves, respites, or remissions of punishment.
(5A) Where a conditional pardon is granted by the President 2[* * *], any condition thereby imposed, of whatever nature, shall be deemed to have been imposed by a sentence of a competent Court under this Code and shall be enforceable accordingly.
(6) The Government may, by general rules or special orders, give directions on the suspension of sentences and the conditions on which petitions should be presented and dealt with.
সুপ্রিয় বন্ধুরা,
জনগণের দাবির পরিপ্রেক্কিতেই ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংযোজন হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা চেলেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছিল ২০০৪ সালে, হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন, সেই রায়ের বিরুদ্দে আপীল বিভাগে আপীল করেন এবং ১০/০৫/২০১১ আপীল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে এবং একই রায়ে বলেছিলেন রাষ্টের ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই দশম ও একাদশ আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ জাজমেন্ট আসার আগেই, আংশিক জাজমেন্ট এর উপর ভিত্তি করেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়। ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক পূর্ণাঙ্গ রায় দেন উনি অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে। কিন্তু আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে, সেই কথাটি পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাখা হয়নি।
আপনারা জানেন যে, 200৮ সালে সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করেছিল। বাংলাদেশের জনগণ মনে করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই অভিযোগগুলো দায়ের করে করেছিল। পরবর্তীতে 200৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নামে আনীত সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়,অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো বহাল রাখে।
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
বর্তমানে এই অবৈধ সরকার বাংলাদেশ বিচার বিভাগ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে শেখ হাসিনা, তার কাছের মানুষ ও দোসরদের নির্দেশাবলী মেনে চলা। যার ফলে তারা স্বাধীন ও ন্যায়পরায়নতার সাথে কোন কাজ করতে পারছে না। সরকার বেগম খালেদা জিয়া সহ অন্যান্য বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন ও হয়রানি বাড়িয়েছে। ফৌজদারী অপরাধ, তার জন্যে শেখ হাসিনা কে একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ইন্শাল্লাহ। তাছাড়া বর্তমান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলায় রায়ের শাস্তি দিয়ে, জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে দেশে ফিরতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে যে, সরকারের এ ধরনের আচরণের কারণ হচ্ছে বেগম জিয়া ও তার দলকে রাজনীতি বিশেষভাবে আগামী অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। অথচ বেগম জিয়ার সরকারই সর্বপ্রথম বাংলাদেশ আইন প্রণয়ন করে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো ব্যবস্থা উপহার দিয়েছিলেন, যার সুফল জনগণ ইতিমধ্যেই ভোগ করেছে। অথচ বর্তমান গায়ের জোরে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামোকে বাতিল করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে ব্যাপক সহিংসতা, ১৭৩ দিন হরতাল ও ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে দুঃসহ ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টিতে বিশেষ অবদান রেখেছিল এবং দেশে রাজনৈতিক শান্তিময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রিয় ভাইয়েরা,
বর্তমান এই একনায়কতান্ত্রিক সরকারের দ্বারা জনগণের বাক স্বাধীনতা,মানবাধিকার, গণতন্ত্র আইনের শাসনের ক্ষেত্রে নগ্ন হস্তক্ষেপ বলেই সবাই মনে করে। বাংলাদেশের জনগণ বর্তমানে কঠিন নৈরাজ্য, চরম আর্থিক দুর্নীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি একটি কঠিন সময় পার করছে। বর্তমান সরকার পূর্বের চরম বিতর্কিত প্রহসনের নির্বাচন ও গত নির্বাচনে অর্থাৎ মধ্যরাতে গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, ভোটের ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত, স্বাস্থ্য সেবা, বাকস্বাধীনতা সহ সর্বোপরি দেশ বিনির্মাণের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ সকল বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ প্রদান ও একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দেওয়া সম্ভব বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
সর্বোপরি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল দেশ প্রেমিক ও মুক্তিকামী জনগণকে দেশ নায়ক তারেক রহমানের আহবান “টেইক ব্যাক বাংলাদেশ” এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে সবাইকে এগিয়ে আসার ও কাজ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার আবুল মনসুর শাহজাহান। সঞ্চালনা করেন ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউ কে।
উপস্থিত ছিলেন ইউকে বিএনপি সভাপতি এম এ মালিক, সেক্রেটারি কয়সর এম আহমদ, আবুল হাসনাত, সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইরজীবী ফোরাম যুক্তরাজ্য।
Posted ০৮:১০ | শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin