| শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা-কর্মী ও তাদের সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়েছেন সাবেক ৫ মন্ত্রীসহ ৪৮ সংসদ সদস্য। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনের সমর্থকরা মাদারীপুর-৩ আসনে তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ, উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করেছে। সংঘর্ষ হয়েছে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পাওয়া ও মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও যশোরের মনিরামপুরে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা তাণ্ডব চালায় রাস্তায় নেমে।
এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে। ওদিকে মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন না দেয়ায় বেলকুচি উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ, উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় ভাঙচুর ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আবুল হোসেনের সমর্থকরা। সৈয়দ আবুল হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে কালকিনির ৩টি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন। এ সময় মহাসড়কের ২ পাশে সহস্রাধিক যানবাহন আটকা পড়ে এবং বিক্ষুব্ধরা ২০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। এছাড়া একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কালকিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় ভাঙচুর ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। জানা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনে সৈয়দ আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ ও ডাসার ডিকে আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমি অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মহাসড়ক সোয়া দু’ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। পরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিতে বললে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বাস, ট্রাক, ইজিবাইকসহ অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
পরে মাদারীপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে এ আসনে বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এ সংবাদ জানতে পেরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপজলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুকের সরকারি অফিস ও বাসা ভাঙচুর করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নমিনেশন বোর্ড ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে দলীয় নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন- এটা আমার প্রত্যাশা।
কিশোরগঞ্জ/পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি জানান, পাকুন্দিয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার খবরে তার কর্মী-সমর্থকরা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে। মিছিল শুরু হওয়ার আগে এ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেনুর ৩-৪ জন সমর্থক তাদের মিছিলকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এর জের ধরে মিছিল শেষে দলীয় প্রার্থী সোহরাব সমর্থকরা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে ফিরে আসলে প্রতিদ্বন্দ্বী রেনুর সমর্থকরা দা, লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে হামলা চালায়। এ সময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বাস কাউন্টার ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙচুর করলে দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ইট-পাটকেলের আঘাতে উভয় গ্রুপের অন্তত ১০-১২ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় আতঙ্কে পাকুন্দিয়া বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলছিল।মনোনয়ন বঞ্চিতদের তাণ্ডবে যশোর অচল
যশোর থেকে জানান, দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার কারণে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের কর্মী সমর্থকরা গতরাতে যশোর শহরে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। ভাঙচুর করে কয়েকশ’ ছোট-বড় গাড়ি। বেশকিছু গণপরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয় দলের মাঠপর্যায়ের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। রাস্তা অবরোধ করার কারণে যশোর- ঢাকা ও যশোর-খুলনা রুটে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বাড়ি ঘর, দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় শাহীন চাকলাদারের বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও এই তাণ্ডব চলাকালে পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। এদিকে যশোর শহর ছাড়াও মনিরামপুরে ও চৌগাছা-ঝিকরগাছা এবং অভয়নগরে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। উল্লেখ্য, যশোরের ৬টি আসনে শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), এডভোকেট মনিরুল ইসলাম (যশোর-২), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), বাবু রণজিত রায় (যশোর-৪), এডভোকেট খান টিপু সুলতান (যশোর-৫) ও ইসমত আরা সাদেক (যশোর-৬) থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বেলকুচি উপজেলায় সকল নেতাকর্মীর পদত্যাগ সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দেয়ায় বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতারা গতকাল সন্ধ্যায় একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণার পরই ুদ্ধ নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমবেত হয়ে গণ পদত্যাগপত্রে স্বার করেন। এ ঘটনার পরই অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীরা বেলকুচিসহ এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলাতেও বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করে। এদিকে, বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আঁতাতের অভিযোগ এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকারের বসতবাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি একেএম ইউসুফজী খান ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার জানান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বেলকুচি-চৌহালী উপজেলার আওয়ামী লীগের সংগঠনকে ধরে রাখাসহ সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। তিনিই এ আসনে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি সপ্তাহে ২দিন এলাকায় এসে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছেন। তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ুব্ধ হয়ে সবাই একযোগে পদত্যাগ করছি। লতিফ বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয়া না হলে এ উপজেলায় দলের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। বিষয়টি আজ জেলা আওয়ামী লীগের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে।
Posted ০২:২০ | শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin