| শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আপোসের কোনো সুযোগ নেই। আপোস করা মানে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া। আমরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারি না। আপনাদের সাথে নিয়ে যেকোনো মূল্যে এই জুলুমবাজ সরকারকে বিদায় করবো ইন্শাল্লাহ্।বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকদের সাথে এক অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মতবিনিময়ের শুরুতেই বেগম জিয়া বলেন, আজ আপনাদের কথা শুনতে এসেছি। চা খেতে এসেছি।
পরে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা মানুষের পাশে আছি, থাকবো। আপনাদের সাথে নিয়েই আন্দোলন মধ্য দিয়ে জুলুমবাজ সরকারকে বিতাড়িত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবো। জাতীয় প্রেসক্লাবকে আন্দোলন সংগ্রামের জ্বলন্ত স্বাক্ষী উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়ায়ে অতীতেও প্রেসক্লাব তথা সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এ প্রসঙ্গে তিনি সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর সাহসী অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সরকারের উদ্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দাবিটি ছিল আপনাদের। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করে আপনারা এটা বাতিল করে অন্যায় করেছেন। এখন এ দাবি আমাদের, আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে অন্যায় করেছেন। আমরা এ অন্যায়কে মেনে নিতে পারি না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পদ পদবীকে আমি বড় করে দেখি না। আমার রাজনীতির শুরু আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, পদ পদবী দিয়ে নয়। দেশের মানুষ ভালো থাকুক আমি সেটাই চাই। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে মানুষের ভালো থাকবে না। এর জন্য স্বৈরাচার ও ফ্যাস্টি সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতে সাংবাদিক সমাজের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা উল্লেথ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে আমি সব সময় ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। কারণ আপনারা দেশকে ভালোবাসেন, আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৭৫’র মে জুনের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে দেশে। গণতন্ত্র বিপন্ন। শান্তি বিনষ্ট। এ অবস্থায় সাংবাদিকতা করা যাবে না।
তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই দাবির পক্ষে এ দেশের প্রতিটি মানুষ।
প্রেসক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সাংবাদিক সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। এদেশের মানুষ আপনাকে শুধু আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই নয়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হিসাবে দেখতে চায়। এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে- একমাত্র আপনার নেতৃত্বেই তাদের সার্বিক মুক্তি সম্ভব।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল আলম বলেন, গণতন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সাংবাদিক সমাজ আপনার (বেগম জিয়া) পাশে আছে।
সিনিয়র সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, বিপন্ন গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে অতীতের ন্যায় বর্তমানেও আপনি সাহসী ভূমিকা রাখবেন, এই প্রত্যাশা দেশবাসীর। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ও ফ্যাস্টি সরকার পতনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, কিন্তু বিএনপির প্রস্তুত নয়। এর জন্য তিনি বিরোধী দলীয় নেতাকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার আহ্বান জানান।
গনতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় বেগম খালেদা জিয়াকে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আহ্বান জানান সাংবাদিক আবুল আসাদ।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান একদল তল্পিবাহক সংবাদ মাধ্যম যারা সব সময় শুধু তার গুনগান গাইবে। বিরুদ্ধের মতকে দমন করার সবগুলি পন্থাই অবলম্বন করছেন শেখ হাসিনা।
বেগম খালেদা জিয়াকে প্রেসক্লাবে স্বাগত জানিয়ে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, সকল আন্দোলন সংগ্রামে প্রেসক্লাব অতীতের ন্যায় বর্তমানেও আপনার পাশে আছে। এ সরকার সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। তাই তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার বলেন, এখন প্রয়োজন কঠিন সিদ্ধান্ত। প্রয়োজন আধিপত্যবাদীদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার বিপ্লব। এতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বলেন, বর্তমান সমস্যার সমাধান রাজপথেই হতে হবে। সারা দেশের নেতা-কর্মীরা যেভাবে আন্দোলন করছে, সে তুলনায় রাজধানীর ভূমিকা হতাশাজনক।
সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বেগম খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতীক উল্লেখ করে বলেন, আন্দোলনের চুড়ান্ত রুপ পরিগ্রহ করতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সংবিধান থেকে এক চুল নড়বেন না কিন্তু মন্ত্রীরা প্রদত্যাগ করে এখনো মন্ত্রীত্বের পদে বহাল রয়েছে। এতে করে সংবিধান থেকে তিনি এক চুল নয় বহুদূর চলে গিয়েছেন। এতে বোঝা যায় প্রধানমন্ত্রীর কথায় সাথে কাজের মিল নেই।
সাংবাদিক মাহমুদ শফিক বলেন, মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে সরকার সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এই সরকার সংবিধান প্রতারক।
তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারন সরকার ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের গণভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, সরকার বিএনপির শীর্ষ ৫ নেতাকে গ্রেফতার ও বিরোধী দলীয় নেতার বাসভবনে পুলিশ মোতায়েন করে বিএনপিকে মরণ কামড় দিতে চাচ্ছে। কারন তারা ভালো করেই জানে বিএনপি রাজপথে থাকলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনোই হবে না।
ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসেন বলেন, দাবি আদায়ের সংগ্রামে সাংবাদিকরা রাজপথে রয়েছে। নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনকে আরো বেগবান করার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল ঠাকুর বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষকে অমানুষ বলে গালি দেয়া হচ্ছে। এত সাহস তারা কোথা থেকে পায় বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারন সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, এ ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোল গড়ে তুলে এ সরকারকে বিদায় জানানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এ জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজপতে নেমে আসতে হবে।
পরে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রেসক্লাবের মেম্বারস লাউঞ্জে চা চক্রে অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক শফিক রেহেমান, অধ্যাপক মাহাবুবউল্লাহ, অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ছড়াকার আবু সালেহ, জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম কাগজী, মাহবুবুল আলম গোরা, খুরশিদ আলম, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, নূরুল হাসান খান, কামরুজ্জামান, একেএম মহসিন, শামসুদ্দিন চারু, সৈয়দ লুৎফুল হক, রাশেদ আহম্মেদ মিতুল, সুমন মাহমুদ, লোটন একরাম, আফজাল এইচ খান, শফিউল আলম দোলন, বাছির জামাল, ইমরান মজুমদার, বিএনপি চেয়রাপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমূখ।
Posted ০১:২৫ | শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin