| মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও সরকারের পৃষ্টপোষকতায় দলীয় সন্ত্রাসীদের জ্বালাও পোড়াও এবং অগ্নি সংযোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ স্বাধীনদেশ পাঠকদের জন্য তা হুবহুব তুলে ধরা হল –
বিবৃতি
তারিখঃ ০৩-১২-২০১৩
“একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল বাতিল এবং সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবীতে ১৮ দলীয় জোট শান্তিপূর্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিরোধী দলের এই যৌক্তিক আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বিরোধী দলের শান্তিপূর্ন ও গনতান্ত্রিক আন্দোলন বানচালের উদ্দেশ্যে এবং জনমনে বিরোধী দলের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে সরকারের দলীয় সন্ত্রাসীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা সংঘটিত করেছে। আমি এই ধরনের নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। একই সংগে এ সব ঘটনার শিকার নিরীহ মানুষ ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিরোধী দলের শান্তিপূর্ন আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। দেশের সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলনের সফলতা দেখে সরকার বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নি সংযোগ করে তার দায় বিরোধী দলের উপর চাপাতে চাচ্ছে। বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা যেখানে রাস্তায় দাঁড়াতেই পারছেনা, পুলিশ যখন বিরোধী দলের মিছিল ও সমাবেশের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে, তখন বাসে অগ্নি সংযোগকারীদের তারা ধরতে পারছেনা কেন? পুলিশের নাকের ডগায় কিভাবে দুস্কৃতিকারীরা বাসে অগ্নি সংযোগ করে পালিয়ে যায়? এই ধরনের ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এহেন নৃশংস ঘটনা সংঘটিত করছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী দল চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই সরকারের সময়ে বিরোধী দলের উপর যে জুলুম-নিপীড়ন চাালানো হয়েছে তা ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর মত একটি ইসলামী গণতান্ত্রিক দলকে নির্মূল করার জন্য সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্র করেছে। জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে বিচারের নামে প্রহসন করে তাদেরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয়, মহানগরী ও জেলা পর্যায়ের কার্যালয় গত ৪ বছর ধরে সরকার সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে বন্ধ করে রেখেছে । জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে কোন ধরনের মিটিং-মিছিল ও সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। রাজপথে জামায়াত ও শিবিরের কর্মী দেখামাত্রই তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। গত ৫ বছরে জামায়াতের প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে গুলি করে আহত করা হয়েছে। জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৬ হাজার মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে জামায়াত ও শিবিরের প্রায় ৫ লাখ নেতা কর্মীকে। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার প্রাক্কালে নতুন মামলায় শোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের জেলগেট থেকে দফায় দফায় গ্রেফতার করা হয়েছে। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে তার উপর বর্বর অত্যাচার চালিয়ে তাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। সরকারের দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এমনকি পর্দানশীন মহিলারাও। এত কিছুর পরও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির গত ৫ বছরে চরম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে, এখনও দিচ্ছে এবং তারা কোন ধরনের সহিংসতায় সম্পৃক্ত হয়নি। জামায়াত গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী একটি দল।
আমরা লক্ষ্য করছি সরকারের পুলিশ বাহিনী বেপরোয়াভাবে জনগনের উপর গুলি চালাচ্ছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, দেশের জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়। জনগনের নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা রক্ষা করা আপনাদের নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব। সেই দায়িত্বে অবহেলা করে দলীয় ক্যাডারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা আপনাদের কাজ নয়। রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে দলীয় আনুগত্য পরিহার করে আপনারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করুন। জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। সরকার আপনাদের ব্যবহার করে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতা স্থায়ী করতে চায়।
আমি অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এ পর্যন্ত বাসে অগ্নি সংযোগ, নাশকতা ও সকল হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে এই ধরনের অপকর্ম যাতে আর সংঘটিত হতে না পারে সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকার এবং ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে গনদাবী মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে দেশে শান্তিপূর্ন পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
মোঃ ইব্রাহিম
কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
Posted ১৬:১৯ | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin