শনিবার ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনবান্ধব আন্দোলন : ছাত্রলীগ ও সরকারের ব্যর্থতা

  |   বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট

জনবান্ধব আন্দোলন : ছাত্রলীগ ও সরকারের ব্যর্থতা

আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল

 

বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে সকল জনবান্ধব কিংবা প্রগতিশীল আন্দোলনে জনগনের সহযোগীতার ফলে প্রায় সবকটি আন্দোলনের সফলতা দেখা যায়। ভাষা আন্দোলন থেকে ছয় দফা, ছয় দফা থেকে মুক্তির সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম থেকে স্বৈরচার বিরুধী আন্দোলন ।সবকয়টি আন্দোলন  রাজনৈতিক আন্দোলন হলেও এখানে ছাত্র জনতার সমন্বয়ে প্রতিটি আন্দোলনের দাবী দাওয়া আদায় করা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের রক্ত ঝড়াতে হয়েছে অনেক। আর এই সব আন্দোলন গুলির সফলতার কারণের বাংলাদেশের প্রতিটি ক্লান্তি লগ্নে ছাত্র জনতা এগিয়ে এসেছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

গত কিছু দিন ধরে আমরা বেশ কিছু আন্দোলন দেখতে পেয়েছি, এর মধ্যে অন্যতম দুটি আন্দোলনের একটি হচ্ছে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন । এটি একটি সুশৃঙ্খল আন্দোলন ছিলো কিন্তু এই আন্দোলনটা বেস্তে যায় যখন কিছু সুযোগ সন্ধানী ক্ষমতা লোভী কিছু লোক বা সংগঠন এই আন্দোলনে অংশ গ্রহন করে সরকার বিরোধী আন্দোলন বানিয়ে ফেলে । এরা আন্দোলনে একাত্ততা ঘোষনা করেই সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্দোলনকে ছাত্রলীগ ও সরকার বিরুধী আন্দোলন বানিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরণের গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে একটি সুন্দর আন্দোলন কে নষ্ট করে।

প্রথমে এই আন্দোলনকে সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠি সমর্থন জানিয়ে নমণীয় হলেও যখই এটি সরকার বিরুধী আন্দোলনে রূপ নেয় তখন সরকার কঠোর হস্তে আন্দোলনকারীদের দমন করা শুরু করলে, যা হওয়ার তাই হয়। সাধারন মানুষ একটি নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন দেখা থেকে বঞ্চিত হয়।

একের পর এক ধর্ষণ যখন সারা বাংলাদেশের মা/বোনদের অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে তখন শুরু হলো ধর্ষকদের বিচারের দাবীতে আন্দোলন।

ধর্ষন কিন্তু বাংলাদেশে আজ নতুন নয়। নিত্য দিন গঠে যাচ্ছে একের পর এক ধর্ষন। কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ পায় আর কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ পায় না।

কোন যায়গায় মহিলা কিংবা শিশু নিরাপদ আছে? মাদ্রাসার বাচ্ছাকে শিক্ষক, পাশের বাড়ীর মেয়েকে পাশের বাড়ীর ছেলে, কাজের মেয়েকে বাড়ীর কর্তা, ছাত্রীকে শিক্ষক এমনকি নিকট আত্মীয় এর কাছ থেকে অনেক সময় ধর্ষন এর শিকার হতে হয় অসহায়দেরকে। আর গত কিছুদিন ছাত্রলীগের কর্মীদের কিছু বখাটে কর্মীদের ধারা এই জগন্য ঘটনা ঘটে এবং যে ভাবে বাংলাদেশে ধর্ষনের গঠনা ঘটে চলেছে, সে হারে আমাদের বুঝে নিতে হবে এটা কোন রাজনৈতিক সমস্যা নয় এটা একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উগ্র যৌন ক্ষুধা মানবতাকে হারিয়ে দিচ্ছে। এই সময় যখন ধর্ষণনের বিরুদ্ধে একটি সামজিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং শুরু হয়েছে ঠিক তখনই সেই অন্ধকারের ক্ষমতা লোভী গোষ্ঠী গুলি এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে সরকার বিরোধী আন্দোলন বানিয়ে দিতে চাচ্ছে। আর এতে আমরা ধারনা করে নিতে পারি যে,এই আন্দোলন কে যখন সরকার বিরুধী আন্দোলনে রূপ দেওয়া হবে এবং ধীরে ধীরে এই আন্দোলন সামাজিক থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নিবে।

আর যখনই এটি সরকার বিরুধী আন্দোলনে রূপ নিবে তখনই সরকার কঠোর হস্তে দমন করা শুরু করবে এবং আরেকটি ব্যর্থ আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজে হতাশা সৃষ্টি হবে। এই আন্দোলনে যখন ছাত্রলীগকে প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে তখন ছাত্রলীগের উচিত ছিলো সুযোগ সন্ধানীদের ফাঁদে পা না দিয়ে,ওদেরকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করে দেশের স্বার্থে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্ত হয়ে আন্দোলন গুলিকে সফ করে দাবী আদায় করা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে অভিবাবক সংগঠন ক্ষমতায় থাকায় দলে আদর্শ বিরুধী ও সুবিধা ভোগী ,উশৃংখল কর্মী সংযুক্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যেমন তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তেমনি দীর্ঘদীন অনেক জেলা/উপজেলায় কিংবা কলেজ গুলিতে কমিটি না থাকায় পাতি নেতাদের উপদ্রোপে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপর আস্থা হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। যখন আন্দোলন গুলি গর্জে উঠছিলো তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উচিত ছিলো তৃণমূল ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে এই সামাজিক আন্দোলন গুলিকে সফল করে জনগনের সংস্পর্শে আসা।

বলতে দ্বিধা নেই যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সরকারের একেক মন্ত্রী কিংবা নেতাদের ভারসাম্যহীন ও অযৌক্তিক কথাবার্তায় যেমন,দলের সাধারণ কর্মীরা হতাশ তেমনি জনগনের কাছ থেকে সরকার ধীরে ধীরে আস্থা হারাচ্ছে আর রাজনৈতিকভাবে বি এন পি অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পরলেও সরকারের রাজনৈতিক ভাবে অনভীজ্ঞ বিভিন্ন মন্ত্রী এম পি কিংবা নেতারা তাদের সভা/সমাবেশ কিংবা প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে বি এন পি জনগনের মধ্যে রেখেই দিচ্ছেন।

তাছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সংগঠিত অপরাধ সমুহের বিচার না হওয়ায় এবং সরকারের প্রতিটি ভালো কর্মকান্ডের বর্ণনা সঠিক ভাবে জনগনের সামনে তুলে না ধরায় বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে সুযোগ সন্ধানীরা দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করছে। আপন মহিমায় ছাত্রলীগ ফিরে আসুক অতীত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে । ফিরে আসুক সঠিক নেতৃত্ব এবং সকল জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের সুনাম ফিরিয়ে না আনলে আর টেন্ডার বাজি, দলীয় নাম ব্যবহার করে বিশৃংখলা, নির্বাচন কালীন সময়ে দলীয় মনোয়ন এর নামে স্থানীয় নেতাদের দালালী, স্থানীয় পর্যায়ে অযোগ্য কে যোগ্য বানানো কিংবা দলীয় এম পি দের মাধ্যমে দালাল প্রবনতা অথবা অপরাধ দমন করা না গেলে কিন্তু শুধু জনগন নয় আওয়ামীলীগ প্রেমী ত্যাগী ও সাধারণ কর্মীরাও বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।

এখনও অনেক সময় বাকী তাই সরকারের উচিত দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশে নিয়ে উশৃংখল, নেতা নামধারী গডফাদার ও দলীয় পরিচয় দেওয়া অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করে, জনগনের পাশাপাশি এগিয়ে গিয়ে, আস্থা ও জনবান্ধব সরকার হওয়া।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২১:৪৭ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com