| শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : কেবল এক দেশ ও এক ব্যক্তির ক্ষমতার লালসার কারণে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে পেশাজীবী নেতারা বলেছেন, সারাদেশে প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে, রক্ত ঝরছে। কিন্তু জনগণের রক্ত অতীতে কখনও বৃথা যায়নি। বর্তমানেও রক্ত দিয়েই জনগণ নব্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে বক্তারা বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পেশাজীবী নেতারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, দেশে বর্তমানে নব্য ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে।
গণতন্ত্রের নামে বিরোধী দলের নেতাদের বাড়ি-ঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, র্যাব-পুলিশ ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষকে গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করছে। বিভিন্ন এলাকায় নারীদের ধর্ষণ ও নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে উল্লেখ করে সাংবাদিক এই নেতা বলেন, সারাদেশে প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে, রক্ত ঝরছে। কিন্তু এদেশের মানুষ অতীতেও রক্ত দিয়েছে। জনগণের রক্ত কখনও বৃথা যায়নি। বর্তমানেও রক্ত দিয়েই জনগণ নব্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।
দেশে ফ্যাসিবাদ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মন্তব্য করে বিএফইউজে মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, শেখ মুজিব ফ্যাসিবাদী শাসন শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। তার মেয়ে এখন তা সম্পূর্ণ করছেন। দিল্লির সমর্থন পাওয়ায় শেখ হাসিনা জনগণের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি দেশ ও এক ব্যক্তির ক্ষমতার লালসার কারণে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। গণমাধ্যমের একপক্ষীয় ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে নতজানু সাংবাদিকতা চলছে। গণহত্যার সহযোগিতা করছে বেশিরভাগ মিডিয়া। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতাদের বাড়িতে হামলার পাশাপাশি নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরিণতি ফেরাউনের মতোই নির্মম হবে।
আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রহসনের এই নির্বাচন ইতিহাসে নজিরবিহীন উল্লেখ করে পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, তামাশার এ নির্বাচনে শাসকরা ছাড়া আর কোনো দল ও মানুষের সংশ্লিষ্টতা নেই। অর্ধেক মানুষ এরই মধ্যে ভোটারাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের ক্ষমতার লালসা ও সীমাহীন দুঃশাসনের কারণে জনগণ জেগে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এদেশের মানুষকে জিঞ্জিরে আটকিয়ে বেশিদিন রাখা যায় না। জনগণ অবশ্যই গণবিস্ফোরণ ঘটাবে।
জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণ সরকারের অগণতান্তিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। জনগণ নেতৃত্ব দেয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, বেশিরভাগ গণমাধ্যম একতরফা সংবাদ পরিবেশন করছে। তারা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কথা বলে না। প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, অনেক হয়েছে, আপনি এখন সরে দাঁড়ান। জনগণকে মুক্তি দিন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী ও নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার কারণে দেশে বর্তমান সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এভাবে সীমা লঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ইসির তফসিল ঘোষণার কারণে দেশে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য কাজী রকীব উদ্দিনের একদিন বিচার হবে। সরকারের করুণ পরিণতির কথা ভেবে অনেকে দেশ ছাড়তে শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরই মধ্যে খিলগাঁও থানার ওসি সপরিবারে বিদেশে পালিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারদেরও একই অবস্থা।
এ সময় তিনি বিরোধী দলের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে অনুপস্থিতির সমালোচনা করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা নব্য হিটলারের ভূমিকায় নেমেছেন। তিনি আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। শেখ হাসিনা যা বলছেন, সেটাই আইন হয়ে যাচ্ছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ সরকারের নির্দেশে মানুষ হত্যা করছে। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার মতোই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনাকে রুখতে না পারলে দেশ টিকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (্এ্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সচিব প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন বলেন, শুধু গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই নয়, দেশের স্বাধীনতাই আজ বিপন্ন হতে চলেছে। মানুষ আজ হাসিনার অধীনতার শাসনে বন্দি হয়ে পড়েছে। এ্যাবের সাবেক সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ, বিএসএমএমইউ’র অর্থপেডিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, ড্যাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল কবির লাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. আবদুস সালাম, ডা. আবদুল কুদ্দুস, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি ও আহম্মেদ আলী চৌধুরী ইকবাল, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুজাহিদুল হক, এ্যাব নেতা প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
Posted ০৮:৪৬ | শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin