| মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর : বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকে চতুর্থ দিনের মতো চলছে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, আটক ও হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে দ্বিতীয় দফায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। তবে সোমবার আরো ৫৯ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানো হয়। মোট ১৩১ ঘণ্টার এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের অবরোধ চলাকালে সাতক্ষীরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছাত্রশিবিরের ২ কর্মী, চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও যুবদলের ২ কর্মী, চট্টগ্রামে অবরোধকারীদের ককটেলে লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে সঙ্গে ধাক্কা খেলে চালক এবং সীতাকু-ে গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মারা যান।
এ ছাড়া সকাল ৯টার দিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং ২টি লেগুনা ও ১টি টেম্পোতে আগুন দেয়া হয়। ককটেলের স্প্রিন্টারের আঘাতে পুলিশসহ কয়েকজন পথচারী আহত হন। এ ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে পান্থপথের কাঁঠাল বাগানের ঢালে শিবিরের ঝটিকা মিছিল থেকে ৫টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় মতিয়ার রহমান নামে শিবিরের এক কর্মীকে আটক করে কলাবাগান থানা পুলিশ। মতিয়ার ঢাকা কলেজের ছাত্র বলে জানা গেছে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়।
রাজধানীর বাইরে অবরোধ কর্মসূচির খবর :
চাঁদপুর : অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের ২ কর্মী নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- যুবদল কর্মী রতন (৩০) ও ছাত্রদল কর্মী সিয়াম (১৮)। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি কার্যালয় থেকে অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে মিছিল বের করে। মিছিলটি জেলার কালীবাড়ী এলাকায় গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়।
এতে রতন ও সিয়ামসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তারা মারা যান।
এ ছাড়া সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাতক্ষীরা : জেলার দেবহাটার সখিপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শিবিরকর্মী হোসেন আলি (১৯) ও আরিজুল ইসলাম (১৪) নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন। নিহত হাসেন আলি গাজিরহাটের আতাপুর গ্রামরে ফজর আলির ছেলে এবং আরিজুল একই উপজেলার গরানবাড়িয়া এলাকার সয়েত আলীর ছেলে।
মঙ্গলবার ভোর থেকে জেলার দেবহাটার সখিপুরে ও কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা এলাকায় রাস্তায় ফেলেরাখা গুঁড়ি ও অবরোধ সরানোর সময় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
এ সময় দেবহাটার সখিপুর এলাকায় আইনশৃঙ্ঘলা বাহিনীর গুলিতে শিবিরকর্মী হোসেন আলি ও আরিজুল ইসলাম মারা যান এবং ৬ জন আহত হন। হোসেন আলি গাজিরহাটের আতাপুর গ্রামরে ফজর আলির ছেলে এবং আরিজুল একই উপজেলার গরানবাড়িয়া এলাকার সয়েত আলীর ছেলে বলে জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান। তবে পুলিশ নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।
জানা যায়, ভোর থেকে কালীগঞ্জের ভাড়াসিমলায় ও দেবহাটার সখিপুরে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে। অবরোধের জন্য রাস্তায় ফেলে রাখা গাছের গুঁড়ি পুলিশ সরানোর চেষ্টা করলে এই সংঘর্ষ বাধে। এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশ ও বিজিবিকে লক্ষ্য করে ককটেল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হোসেন আলি মারা যান।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি নিহতের বিষয়টি সঠিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেননি বলে জানান।
চট্টগ্রাম : জেলার সীতাকু-ে পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এবং চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগোলা রেলক্রসিং এলাকায় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেলে একটি কনটেইনার লরিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাকা খেলে লরি চালক নিহত এবং ২ জন আহত হন।
সোমবার গভীর রাতে জেলার সীতাকু-ে অবরোধের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটিং করার সময় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শরিফুল ইসলাম রাসেল নিহত হয়েছেন। তিনি মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে তিনি। রাসেল মুরাদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।
জানা যায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশি নিরাপত্তায় শতাধিক গাড়ি চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ৩০-৪০ জন পিকেটার গাড়িবহরে হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে শরিফুল গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগোলা রেলক্রসিং এলাকায় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেলে একটি কনটেইনার লরিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাকা খেলে লরি চালক নিহত এবং ২ জন আহত হন।
সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতের নাম মাহবুব (২৫)। তিনি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুর নবীর ছেলে।
জানা যায়, ইপিজেডে যাওয়ার সময় কনটেইনার লরিটিকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাত অবরোধকারীরা ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে লরিটিতে আগুন ধরে যায়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মেহেরপুর : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের চতুর্থ দিনে মেহেরপুরের ৪টি স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জোটের নেতাকর্মীর। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণেরও ঘটনা ঘটে।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গাংনী উপজেলা শহরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কে টায়ায় জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে রাজনগর, কায়েম কাটার মোড় ও বন্দর মোড়ে অবরোধ করা হয়।
ভোর ৬টার দিকে স্থানীয় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর মোড়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। এ সময় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী লাঠি নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর পিটিআই মোড়ে অবরোধ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফারুক হোসেনসহ জোটের নেতারা।
জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে মেহেরপুর-কাথুলী সড়কে শহরের অদূরে কায়েম কাটার মোড়ে অবরোধ করা হয়। এ সময় গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এ ছাড়া ১০/১২টি ককটেল বিস্পোরণ ঘটানো হয়।
অবরোধের সময়ে মেহেরপুর শহর কার্যত অন্যান্য জেলা থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়। সকাল সোয়া ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মানিকগঞ্জ : ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জের ভাটবাউর এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে পাটুরিয়াগামী একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে অবরোধকারীরা। তাদের ছোড়া পেট্রল বোমায় ট্রাকটি আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় ট্রাক চালক সেকেন্দার আলী আহত হন। ভোর ৫টার দিকে মহাসড়কের মুলজানের ভাটবাউর এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি হুমায়ন কবীর জানান, মহসড়কের ভাটবাউর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে বড় দুটি কড়ই গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে অবরোধকারীরা। এ সময় পাটুরিয়াগামী একটি ট্রাক আসা মাত্রই অবরোধকারীরা পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ট্রাকটির সামনের সিটসহ বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গোলড়া হাইওয়ের সার্জেন্ট মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, হামলাকারীদের চেনা যায়নি। এসব ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, সকালে ট্রাকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা-আরিচা হাইওয়ে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গাছের গুঁড়ি রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
Posted ১২:৩২ | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin