বৃহস্পতিবার ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা : কলঙ্কিত নির্বাচন থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে; ঘটনার স্বরূপ উন্মোচনে নাগরিক কমিটি গঠন জরুরি; ড. এমাজউদ্দীন ; হামলাকারীদের মুখোশ উন্মোচন প্রয়োজন : বিচারপতি রউফ ; সব ধর্মাবলম্বীকে নিয়ে তদন্ত কমিটি হবে : গাজী ; সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন : শওকত মাহমুদ

  |   রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট

goaltable-boithoke-bishi

স্টাফ রিপোর্টার : গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ৫ জানুয়ারির অগ্রহণযোগ্য ও ভোটারবিহীন কলঙ্কিত নির্বাচন থেকে দেশের জনগণ ও বিদেশিদের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা এর সুবিধা নিয়ে দায় চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। সাম্প্রদায়িক এ দাঙ্গা ছড়িয়ে শেখ হাসিনা অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিচ্ছেন। বক্তারা এ হামলার ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, হামলার সময় নির্যাতিতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করলেও তারা তাত্ক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ হামলার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা : স্বরূপ সন্ধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সভায় বক্তারা অসুস্থ ও আবর্জনাতুল্য রাজনীতির কারণেই সংখ্যালঘু হামলার ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে নাগরিক কমিটি এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে ঘটনার স্বরূপ উন্মোচন করে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ, বিএফইউজে মহাসচিব শওকত মাহমুদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিশ্ব বৌদ্ধধর্ম ঐক্য ফেডারেশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট ডি কস্টা, বাংলাদেশ বৌদ্ধিস্ট সম্প্রদায়ের নেতা সুশীল বড়ুয়া, সিনিয়র সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা অধ্যাপক মার্শাল এম চিরাল, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সমিতির সভাপতি মৃগেন হাগীদগ, সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুব্রত, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার।

অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা দেশে-বিদেশে গর্ব করে বলি এই দশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ; কিন্তু বর্তমানে এদেশের সাম্প্রদায়িক কিছু ঘটনা আমাদের মর্মাহত করেছে। দেশের জনগণ ও বিদেশিদের দৃষ্টি এ প্রহসনের নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। অসুস্থ ও আবর্জনাতুল্য রাজনীতির কারণেই এসব হামলা হচ্ছে। আর দায় চাপানো হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও জামায়াত-শিবিরের ওপর।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও নেই। এটা ফ্যাসিবাদী নািস শাসনেই কেবল সম্ভব। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এটা কখনো সম্ভব নয়। শুধু ভারত ছাড়া সারা বিশ্ব এ প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছে। ভারতের সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমগুলো এ নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করেছে।

বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, কোনো রাষ্ট্রেই সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর বিভাজন সৃষ্টি ঠিক নয়। আমাদের সময় এসেছে সোচ্চার হওয়ার, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অবিলম্বে নাগরিক কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই কমিটি চিহ্নিত করবে কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সেটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে। তাহলেই আসল চেহারা উন্মোচিত হবে।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, সরকার ঘটনার তদন্ত না করেই বলছে এর সঙ্গে বিরোধী দল দায়ী। কিন্তু বর্তমান কঠিন চাপের মধ্যে থাকা বিরোধী দল সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাবে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
সভাপতির বক্তৃতায় রুহুল আমিন গাজী বলেন, কারচুপির নির্বাচনের পর দেশের মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হওয়ার পর তা বাধাগ্রস্ত করতেই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। সরকার সব ধর্মাবলম্বীসহ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অচিরেই সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো পরিদর্শন করে আসল ঘটনা উন্মোচনের ব্যবস্থা করব।

শওকত মাহমুদ বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিচ্ছেন। এর আগে ভারতে রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেয়ার আগে ভারতবর্ষে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সুবিধাভোগকারী হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প রুখে দিতে সাংবাদিকরা সব সময় ভূমিকা রেখেছেন, এবারও রাখবেন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। এটা আধিপত্যবাদী শাসকগোষ্ঠী ও বিদেশিদের ষড়যন্ত্র। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক এ হামলার ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে গৌতম চক্রবর্তী বলেন, অগ্রহণযোগ্য ও ভোটারবিহীন কলঙ্কিত নির্বাচন থেকে দেশের জনগণ ও বিদেশিদের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, যশোরে পরাজিত প্রার্থী শেখ ওহাবের লোকজনই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানোর প্রমাণ পাওয়ার পরেও ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা এখন স্লোগানে পরিণত হয়েছে।
এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এর বিচার হচ্ছে না। ফলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সময় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, তাদের বাড়ি-ঘরে হামলার সময় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতিতদের সহায়তা করেনি।

অ্যালবার্ট ডি কস্টা বলেন, বর্তমানে কথায় কথায় জঙ্গিবাদের কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু আসলে দেশে কোনো জঙ্গিবাদ নেই। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল অস্তিত্ব সংকটে পরলেই জঙ্গিবাদের ধুয়া টেনে আনে। অধ্যাপক মার্শাল এম চিরাল বলেন, আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে। তারা যতদিন দেশ শাসন করবে, ততদিন দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হবেই।

মৃগেন হাগীদগ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে অপকৌশল হিসেবে এসব হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার এ চক্রান্ত ছয় মাস আগেই ঠিক করা হয়েছিল দাবি করে সুশীল বড়ুয়া বলেন, রাষ্ট্র ও কিছু বিদেশি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছে তা নিয়ে আগামী ৫০ বছর লোকজন হাসাহাসি করবে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচারে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। সরকার সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায়সহ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৩৫ | রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com