সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গত ১০ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ২৪৫

  |   শনিবার, ২৯ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

গত ১০ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ২৪৫

odhikar

গত ১০ মাসে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ২৪৫টি। গত বছরের মে থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দশ মাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এ হিসাব দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেমিনারে সংগঠনের সভাপতি ড. সি আর আবরার এ তথ্য জানান। সেমিনার পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান।

অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার, কথিত বন্দুকযুদ্ধ, গুম, অপহরণ ও নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে এই হত্যা সংঘটিত করেছে।
অধিকারের দেয়া তথ্য মতে, গত বছরের মে মাসে ৭৪ জন, জুন মাসে ১০ জন, জুলাই মাসে ১৩ জন, আগস্ট মাসে ১০ জন, সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচজন, অক্টোবর মাসে ১৫ জন, নভেম্বর মাসে ১২ ও ডিসেম্বর মাসে ৫১ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে ৩৯ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩ সালের শেষের ৮ মাসে ১৯০ জন ও চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৫৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২৪৫ জনের মধ্যে ক্রসফায়ারে ৭৬ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে ১২ জন, বেদম প্রহারে চারজন ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৫৩ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে।
সেমিনারে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ২৪ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। অথচ তারা এখনো পর্যন্ত এই তালিকা প্রকাশ করেনি। তিনি প্রশ্ন করেন, ৬১ জনের তালিকা দিতে না পারার অপরাধে যদি অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের জেল হতে পারে তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কী হবে, মিথ্যা তথ্য দেয়ার অপরাধে তাদের কত বছরের জেল হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, যে সরকারের আমলেই হোক, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে ওই সরকারের উচিত দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা বলেন ক্রসফায়ার হচ্ছে না।
গ্রাম-গঞ্জে র‌্যাবের পরিচয়ে মানুষকে তুলে নেয়ার কয়েক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। আসিফ নজরুল সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা ক্রসফায়ারের বিচার করেন। যদি বিচার করতে না পারেন তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে গিয়ে বিচার চান। বিএনপি-জামায়াত যদি করে থাকে তাহলেও তাদের বিচার করা হোক। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে এই তথ্য পৌঁছে দেন। আসিফ নজরুলের সাথে একমত প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেছেন, এখন গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চলছে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বাদ দিয়ে মানবাধিকার রক্ষার কথা বলা যাবে না। এমন একটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আসাদুজ্জামান নুরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামি গ্রেফতার হয়েছে, এর সবই ঠিক আছে। কিন্তু কোনো বিচার ছাড়া আসামিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত কে দিয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয় না। তারাই এর মদদ দিয়ে থাকে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেনস্ট টর্চারের চেয়ারম্যান ভেস বার্থলেট, দৈনিক আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল হক, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান মো: জাকির হোসেন মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ফরিদা আক্তার প্রমুখ।
বক্তাদের সবাই দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও আগামীতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দেশে সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আরো বাড়বে। অচিরেই এর সমাধান হওয়া উচিত।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:০০ | শনিবার, ২৯ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com