রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা থাকলে কোরবানি আবশ্যক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা থাকলে কোরবানি আবশ্যক

ছবি: প্রতীকী

 

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম কোরবানি। এটি একটি আর্থিক ও আত্মিক ইবাদত। একনিষ্ঠ নিয়তে নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিকের জন্য কোরবানি করা আবশ্যক।

 

কিন্তু কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা থাকলে কোরবানি করা আবশ্যক?

কোরবানি বছরে একবার দিতে হয়; তবে অনেকেই জানে না যে, কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা থাকলে কোরবানি করা আবশ্যক? এটা না জানার কারণে অনেকের ওপর কোরবানি আবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত থেকে বিরত থাকে। কী পরিমাণ টাকা বা সম্পদ থাকলে কোরবানি আবশ্যক; এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারদের থেকে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। যেমন-

 

‘পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ সোনা বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ সোনা বা রুপার বাজারদর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা আবশ্যক’।

হিজরি বছরের জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি পশু জবাই করতে হয়। কোরবানি দেওয়ার জন্য শর্ত হলো এ দিনগুলোতে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের খরচ ছাড়া অতিরিক্ত নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি আবশ্যক।

সম্পদ বা টাকার নিসাব

সম্পদের নিসাব হলো- সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা এর সমমূল্য কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা কিংবা তার সমমূল্যের সম্পদ থাকা। আর কোরবানি আবশ্যক হওয়ার জন্য এ পরিমাণ টাকা বা সম্পদ এক বছর মালিকানাধীন থাকতে হবে এমন কোনো শর্ত প্রযোজ্য নয়।

১. সোনার নিসাব ও মূল্যের বিবরণ

কেউ যদি সোনাকে নিসাব ধরে তবে তাকে সাড়ে ৭ ভরি/তোলা সোনার মূল্যের ওপর টাকার পরিমাণ হিসাব করতে হবে। যেমন চলতি বছরের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী-

> ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) দাম- ৭২ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি সোনার দাম- ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

> ২১ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) দাম ৬৯ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি সোনার দাম- ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা।

> ১৮ ক্যারেটের সোনার প্রতি ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) দাম ৬০ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি সোনার দাম- ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

> সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম- ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি সোনার দাম- ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৫০টাকা (সোনার এ দাম ওঠা নামা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজার দর হিসাব করে নিসাব নির্ধারণ করতে হবে)

সুতরাং যারা সোনার নিসাবে কোরবানি করবেন, তাদের জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকা বা সম্পদ জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখ (এ তিন দিন) তাদের মালিকানায় থাকলে তার জন্য কোরবানি দেওয়া আবশ্যক।

২. রুপার নিসাব ও মূল্যের বিবরণ

কেউ যদি রুপাকে নিসাব ধরে তবে তাকে সাড়ে ৫২ ভরি/তোলা রুপার মূল্যের উপর টাকার পরিমাণ হিসাব করতে হবে। যেমন চলতি বছরের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী-

> ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার মূল্য ১ হাজার ৫১৬ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দাম হয়- ৭৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

> ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৪৩৫ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা বা ভরির দাম হয়- ৭৫ হাজার ৩৩৭ টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

> ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরির দাম হয়- ৬৪ হাজার ৩১২ টাকা পঞ্চাম পয়সা। এবং

> সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপার দাম ৯৩৩ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরির দাম ৪৮ হাজার ৯৮২ টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

তাই কারো কাছে যদি সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকাও থাকে তবে তাকে রুপার নিসাব পরিমাণ অর্থের বিধান অনুযায়ী কোরবানি করতে হবে।

সুতরাং পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ সোনা বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ সোনা বা রুপার বাজারদর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা আবশ্যক।

রদ্দুল মুহতার গ্রন্থে এসেছে, ‌‘সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম নর-নারী ঋণমুক্ত থাকা অবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে কোরবানি না করলে ওয়াজিব তরকের দায়ে গোনাহগার হবেন’।

বাদায়েউস সানাঈ গ্রন্থে এসেছে, ‌‌‘নাবালেগ; পাগল; যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকও হয় তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে থেকে কোরবানি করলে তা বিশুদ্ধ হবে’।

দুররুল মুখতার গ্রন্থে এসেছে, ‘মুসাফিরের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। মুসাফির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে ব্যক্তি কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে’।

বাদায়েউস সানাঈতে এসেছে, ‘কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোরবানি ৩ দিনই মুকিম থাকা জরুরি নয়। বরং কেউ যদি এ ৩ দিনের শুরুর দিকে মুসাফির থাকে আর শেষ দিকে মুকিম হয়ে যায় তবে তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার কোরবানি ওয়াজিব হবে। আর কেউ যদি এ ৩ দিনের শুরুতে মুকিম থাকে এবং শেষের দিকে মুসাফির হয়ে যায় তাহলে তার ওপরে কোরবানি ওয়াজিব হবে না’।

ইয়া আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহর সব নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করার মাধ্যমে আপনার নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূএ : ডেইলি-বাংলাদেশ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:০৪ | শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com