শাহরিয়ার মিল্টন | রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
শেরপুর : আখের চাহিদা সবসময় থাকলেও গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কারণ গরমে আখের মিষ্টি সতেজ রস প্রাণে তৃপ্তি আনে। আখের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার জাতের বা কালো রঙের আখ সম্প্রতি বাংলাদেশে গবেষণা পর্যায়ে থাকালেও শেরপুরে এ আখ চাষে ব্যপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে চাষীদের মাঝে। এ আখ সল্প খরচে অধিক ফলন, ওষুধিগুন, দেশীয় আখের চেয়ে মোটা, অধিক রসালো এবং দ্বিগুন লম্বা হয়ে থাকে।
ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা বিভাগ শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছে। ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে এ আখ পরিপক্ক ও রসালো এবং প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে এ আখ চাষে ব্যপক আগ্রহ শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ফিলিপাইনের কালো রঙের বা ব্ল্যাক সুগার শুধু গরমে তৃপ্তিই নয় এর রয়েছে অনেক ওষুধিগুণ।
মুখে ব্রন উঠা, মুখের উপর বলি রেখা দূর করে এ আখের রস। ফলে ঢাকায় এ রসের অনেক চাহিদা। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সব থেকে ভাল জাতের আখ হলো এই ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ। বাজারে যেসব আখ পাওয়া যায় অনেক সময় সেগুলো শক্ত, মিষ্টি ও রস কম থাকে। কিন্তু ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের এ আখ সেই দিক দিয় বেশ ভালো জাতের আখ। এ আখের মিষ্টতা অনেক বেশি ও নরম থাকায় বৃদ্ধ ও শিশুরা এই আখ অনায়াশেই চিবিয়ে খেতে পারে। এর খোসা হাতের আঙুল দিয়েও ছাড়ানো যায়। বানিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা গ্রামের ঢাকায় একটি বেসরকারী কলেজের শিক্ষক আব্দুর রহিম তার গ্রামের বাড়িতে গত বছর থেকে তার নিজস্ব ৫০ শতক জমিতে এই ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের প্রায় ১২ হাজার চারা রোপণ করেন। বাজারে দেশী যে আখগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো সাধারণত সবোর্চ্চ ১০ ফিট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু ফিলিপাইন জাতের আখের উচ্চতা প্রায় দ্বিগুন হয় অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট।
এ আখের নানা গুনের পাশাপাশি চাষেও রয়েছে ভিন্নতা ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটি চারার গোড়া থেকে আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫টি চারা গজায় এবং প্রতিটি গাছ লম্বা হয় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ফুট। সার-পানি খুব বেশী প্রয়োজন হয়না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। একবার এ চারা রোপণ করলে পরবর্তি ৩ বছর আর নতুন করে রোপণ করার প্রয়োজন হয়না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে আখের চারা গজিয়ে উঠে এবং তা থেকে পরবর্তি বছরে আবারও ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিটি আখ থেকে প্রায় ৩ কেজি রস বের করা যায়। যা দেশীয় আখ থেকে সম্ভব নয়। বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে বেশি। প্রতিটি আখ ১শ টাকায় বিক্রি করা যায়। তাই আশপাশের অনেকেই এ আখ ক্ষেত দেখতে আসছেন এবং এ আখ চাষের চিন্তাও করছেন কেউ কেউ। শ্রীবরদীতে ওই চাষির আখ দেখে ইতিমধ্যে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে পাশ্ববর্তী মালাকুচা গ্রামের এক চাষি প্রায় এক একর জমিতে আখ আবাদ শুরু করেছেন। এছাড়া শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামের তালুকদার এগ্রো কৃষি খামারে প্রায় এক একর জমিতে এ আখের আবাদ শুরু করেছে।
আখ চাষি রহিম মিয়া বলেন, ফিলিপাইন এ আখের চারা তিনি রাজশাহী থেকে নিয়ে আসেন। এরপর তার ক্ষেতের পরিপক্ক আখ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেন। এ আখে পোকা মাকড় বা রোগ বালাই নেই বললেই চলে। শুধু সামান্য কিছু সার এবং সুষ্ক মওসুমে কিছু সেচের প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিষ্কার ও চাষ পদ্ধতির নিয়মনিতি মানলে এ আখ পরিপক্ক হতে সাধারণত ৮ থেকে ১০ মাস মাস সময় লাগে । তিনি জানান, এ আখ ক্ষেতের পুর্নাঙ্গ আখের চেয়ে এর চারার বেশ চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যে সে তার আখ গাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করেছেন । আর প্রতিটা আখ ১ শ টাকা করে প্রায় ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছে। রোকেয়া-নবাব এগ্রো ফার্ম নামে একটি অনলাইন পেইজ খোলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চারার অর্ডার পাচ্ছেন। বর্তমানে অর্ডার রয়েছে আরো ১৫ হাজার চারা।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার জাতের আখটি এখনও গবেষণা পার্যায় থাকলেও এর ফলনে কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটি ১৯১৮ সাল থেকে নটিফাইট ক্রপ হিসেবে গবেষনা চলছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর গবেষণার ডাটা হাতে আসলে এবং ভ্যারাটি জাচাই বাছাই শেষে বানিজ্যিকভাবে যখন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে তখন কৃষকরা অধিক লাভের এ আখ চাষে আরো বেশী আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।
Posted ০৮:৪৫ | রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin