নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
দান-সদকা গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। এর অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে কোরআন হাদিসে। অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সুরা বাকারা: ২৭৪)
দান করতে হয় নিজ দায়িত্বে অভাবীদেরকে খুঁজে খুঁজে। দান-সদকার টাকা যেন প্রকৃত হকদারের কাছে যায় সেজন্য নবীজি (স.)-এর নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। নবীজির দৃষ্টিতে যারা প্রকৃত অভাবী, তাদের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।
১) যারা লজ্জায় কারো কাছে চায় না
কিছু মানুষ অর্থসংকটের শিকার, কিন্তু ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য ও সামাজিক অবস্থানের কারণে চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে চায় না। মুখ খুলে কিছু বলতেও পারে না। দান করার সময় খুঁজে খুঁজে তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এভাবে—‘তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারো কাছে সওয়াল করে না, তাই অজ্ঞ লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে চিনতে পারবে।’ (সুরা বাকারা: ২৭৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘এক-দুই লোকমা খাবার বা এক-দুইটি খেজুরের জন্য যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়- অভাবী তো সে নয়; প্রকৃত অভাবী হলো যার অভাব আছে, কিন্তু তাকে দেখে তার অভাব আঁচ করা যায় না; যার ভিত্তিতে মানুষ তাকে দান করবে। আবার চক্ষুলজ্জায় সে মানুষের দুয়ারে হাতও পাততে পারে না।’ (সহিহ বুখারি: ১৪৭৯; সহিহ মুসলিম: ১০৩৯)
২) নিকটবর্তী লোক
দান-সদকার জন্য অগ্রাধিকার পাবে নিকটাত্মীয়রা। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর নিকটাত্মীয়ের অধিকার রক্ষা করো।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৬)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি: ৬১৩৮)
এতে একদিকে যেমন সদকার সওয়াব পাওয়া যায়, একইসঙ্গে আত্মীয়তার হকও আদায় হয়ে যায়। তাই রাসুল (স.) নিকটবর্তীদের দান করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং একে দ্বিগুণ সওয়াব লাভের মাধ্যম বলেছেন। তিনি বলেছেন, মিসকিনকে দান করলে কেবল দান করার সওয়াব লাভ হয়। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দুটি সওয়াব—দান করার সওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব।’ (জামে তিরমিজি: ৬৫৮; মুসনাদে আহমদ: ১৬২৩৩)
তবে হ্যাঁ, সবসময় অন্যসব গরিব-দুঃখীদের এড়িয়ে কেবল নিকট জনদের দান করতে হবে, এমনও নয়। কখনো হতে পারে নিকটাত্মীয়ের চেয়েও অন্যদের অভাব ও প্রয়োজন বেশি। দান করার সময় তাদের প্রতিও লক্ষ্য রাখা উচিত।
৩) বেশি অভাবী বা যার প্রয়োজন বেশি
দান-সদকা বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাপকাঠি হচ্ছে প্রয়োজন ও অভাব। যদি প্রতীয়মান হয় যে, আপনার চেনা দরিদ্রদের মধ্যে কেউ একজন অন্যদের চেয়ে বেশি অভাবী, তাহলে সেই ব্যক্তি সদকা পাওয়ার অধিক উপযুক্ত।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো—দান যত গোপনে করা যায় ততই মঙ্গল। প্রকাশ্যে করলেও অসুবিধে নেই। কিন্তু গোপনে করাটা বেশি নিরাপদ এবং ফজিলতপূর্ণ। গোপন দান আল্লাহ খুব পছন্দের আমল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক ভালো। (সুরা আল বাকারা: ২৭১)
তাছাড়া সহিহ নিয়তে, হালাল অর্থ থেকে দান করতে হবে। আর দানের পর খোটা দেওয়া যাবে না। আল্লাহ বলছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা নিজেদের দান-খয়রাতকে সে ব্যক্তির মতো ব্যর্থ করে দিও না যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে..।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল বিষয়ে প্রিয়নবীজির নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম
Posted ০৮:১০ | বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain