নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
কবর জিয়ারতে অন্তরে মৃত্যু ও পরকালের ভয় জাগ্রত হয়। ফলে গুনাহ ছেড়ে দিয়ে নেক আমলের দিকে অগ্রগামী হয় বান্দা। এজন্য ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি না থাকলেও পরে রাসুলুল্লাহ (স.) অনুমতি দেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে—‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১)
কবর জিয়ারতের দোয়া
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার’ অর্থ: ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন।’ (তিরমিজি: ১০৫৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন—السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন’ অর্থ: মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (মুসলিম: ২৪৯)
কবর জিয়ারতের নিয়ম-কানুন
কবরস্থানে গিয়ে প্রথমে সালামের উল্লেখসহ দোয়াগুলোর যেকোনো একটি পড়বেন। এরপর দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়— সেগুলো পড়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবেন।
কবর সামনে রেখে দুহাত তুলে দোয়া করা শোভনীয় নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা উচিত। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন। (ফাতোয়ায়ে আলমগিরি: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০, কিতাবুল কারাহিয়্যা)
জুমার দিন কবর জিয়ারতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত: ৬১১৪)
মনে রাখতে হবে, কবরস্থানে গিয়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা শিরক কিংবা বিদআতের পর্যায়ে চলে যায়। যেমন কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু কামনা করা, কবরের মাটি ছুঁয়ে সালাম বা সেজদা করা, কবরে মানত বা দান-খয়রাত তথা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, ডিম দেওয়া ইত্যাদি।
কবরের পাশে কান্না করা, হা-হুতাশ করাও ইসলামে নিন্দনীয়। প্রিয় মানুষের কবরের পাশে গেলে মনের অজান্তে চোখের পানি চলে আসা স্বাভাবিক। তবে সেখানে গিয়ে হায়-হুতাশ করা ঠিক নয়। এই আশঙ্কার কারণেই নারীদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) মহিলা কবর জিয়ারতকারী, তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ৩২৩৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী কবর জিয়ারতের মাধ্যমে মৃত্যু ও পরকালের ভয় জাগ্রত করে নেক আমলের দিকে অগ্রগামী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Posted ০৭:০৬ | রবিবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain