| রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার আনোয়ারপুর এলাকা থেকে রূপসী বাংলা ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাহকদের কোটি টাকা আত্মসাত করে উধাও হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে এনজিও’টির কর্তা ব্যক্তিরা কার্যালয় দুইটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। ইতিপূর্বে হবিগঞ্জে এইম ওয়ে নামে অপর একটি সংস্থা কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। শায়েস্তাগঞ্জ কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রতারিত ভূক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে আমাদের শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল হক রেনু জানান- বিগত ৩ মাস পূর্বে রূপসী বাংলা ফাউন্ডেশন যার রেজিস্ট্রেশন নং (গভঃ রেজিঃ নং এস-১০৩৭০ (৮৮২)/২০০৯) নামে একটি এনজিও শায়েস্তাগঞ্জের পূর্ব বাগুনীপাড়ায় প্রজেক্ট প্রশিক্ষণ অফিস খুলে। পরে এনজিও’র কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র ও ব্যবসায়ীক ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি ১ লাখ টাকায় ২০ হাজার ও ২০ হাজার টাকায় ১ হাজার টাকা হারে জামানত নেন। এ হিসেবে তারা ৬ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৮০ লাখ টাকা। গ্রাহকদের প্রত্যেককেই শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে ঋণ দেওয়া হবে বলে অফিস থেকে জানানো হয়।
ঋণের আশায় সকালে এ কার্যালয়ে জামানতকারীরা আসতে থাকে। তারা এসে দেখতে পায় এ অফিসে তালা ঝুলছে। এ সময় তারা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় লোক ও সাংবাদিকদের কাছে ঋণের ব্যাপারে নানা তথ্য দেন। এমনই কয়েকজন গ্রাহকের সাথে এ প্রতিনিধির আলাপ হয়।
ভূক্তভোগী শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া গ্রামের করম আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম (৩০) জানান- তারসহ চারজনের ২০ হাজার ৫’শ, পূর্ব বাগুনীপাড়ার হরমুজ আলীর ছেলে আব্দুস শহীদ (৪০) জানান- তারসহ দুইজনের ৫ হাজার, চুনারুঘাট উপজেলার উলুকান্দি গ্রামের আব্দুস ছোবহানের স্ত্রী জাহেরা বেগম (৩০) জানান- তারসহ চার জনের ২০ হাজার, এরশাদ উল্লার স্ত্রী নিলুফা বেগম জানান- তারসহ চারজনের ২০ হাজার ৫’শ, আরজু মিয়ার স্ত্রী লিল বানু জানান- তারসহ ১০ জনের ১৫ হাজার, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামের আলতাব আলীর ছেলে খেলু মিয়া বলেন- তাদের তিনজনের ৪৫ হাজার, লস্করপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আবুল হোসেন (৩২) জানান, তারসহ তিনজনের ৫ হাজার, আশ্রয়নের বশির মিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম (৪০) জানান- তারসহ তিনজনের ৫ হাজার ও শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম (৩০) দাবী করেছেন তার ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে জামানত হিসেবে জমা দিয়েছেন এ অফিসে।
তারাসহ শত শত ভূক্তভোগী অফিসে এসে তালা ঝুলতে দেখে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ ব্যাপারে জানতে রূপসী বাংলা ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার (নাম জানা যায়নি) মোবাইল ফোনে (নং- ০১৯৬৫২৭৯০৮৮) বার বার কল দিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মেয়র মোঃ ফরিদ আহমেদ অলি’র সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- রূপসী বাংলা ফাউন্ডেশন নামে সংস্থা প্রজেক্ট অফিস খোলার ক্ষেত্রে পৌরসভার কোন অনুমোদন নেয়নি। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান- ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমাদের স্টাফ রিপোর্টার অসিত কুমার চৌধুরী জানান- বানিয়াচং উপজেলার আনোয়ারপুর এলাকায় একই কোম্পানী কিছুদিন আগে কার্যক্রম শুরু করে। তারা হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি, উমেদনগর, নাতিরপুর ও বানিয়াচং উপজেলার আনোয়ারপুরসহ কমপক্ষে ১০টি গ্রামের ৮ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
জানা যায়- ওই সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হোছাইন আক্তার গ্রাহকদেরকে ৫ হাজার টাকা জমা হলে টমটম, গাভীসহ ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদানের কথা বলে। আর এই লোভে পড়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ টাকা জমা করতে শুরু করে। শনিবার সকালে রিচি গ্রামের পারুল বেগম নাতিরপুর গ্রামের রাজু মিয়া, উমেদনগর গ্রামের ছালাম মিয়াসহ অর্ধশত গ্রাহক জানান তারা ৫ হাজার টাকা করে অর্থ এ সংস্থায় জমা দিয়েছেন।
Posted ০২:৫১ | রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin