নিজস্ব প্রতিবেদক,
ঢাকা : একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটোসাংবাদিক, দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক চিফ ফটোগ্রাফার আফতাব আহমেদকে (৭৮) খুন করেছে দুর্বুত্তরা। রাজধানীর রামপুরার ওয়াপদা রোডের বাসা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বুধবার সকালে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) নাসিম আহমেদ নতুন বার্তাকে জানান, ওই বাসায় আফতাব আহমেদ একাই থাকতেন। তার মেয়ের জামাই বুধবার সকাল নয়টার দিকে পুলিশে খবর দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আফতাব আহমেদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তার ঘরটি তছনছ করা হয়েছে। কিছু খোয়া গেছে কি-না তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তার গাড়িচালক কবির পলাতক রয়েছে।
জানা যায়, পশ্চিম রামপুরার ৬৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে চারতলা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকতেন আফতাব। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে মনোয়ার আহমেদ থাকেন যশোরে। আর মেয়ে আফরোজা আহমেদ তার স্বামী ফারুক আহমেদের সঙ্গে থাকেন গাজীপুরে।
প্রতিবেশীরা জানান, গৃহকর্মী নাসিমা প্রতিদিনের মতো সকালে রান্না করতে এসে বাসায় কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে অন্য ভাড়াটিয়াদের জানায়। এরপর তারা আফতাবের মেয়ে ও স্বামীকে খবর দেয়।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামে বাসন্তীর ছবি তুলে আফতাব আহমেদ দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছিলেন। আলোকচিত্র সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৬ সালে মর্যাদাপূর্ণ একুশে পুরস্কার লাভ করেছিলেন কৃতী এ সাংবাদিক।
আফতাব আহমেদের বর্ণাঢ্য জীবন
আফতাব আহমেদ ১৯৩৫ সালে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানার মহিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। মাইনর স্কুলের পর ১৯৪৮ সালে তিনি রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করেন। সে বছরই আইএ তে ভর্তি হন।
বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরি করার পর অবশেষে ১৯৬২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে ফটোসাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তার তোলা ছবি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। একাত্তর সম্পর্কিত আফতাব আহমদের তোলা অনেক ছবি ইত্তেফাকে ছাপা হয়েছিল। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ছাড়াও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ৭ নভেম্বরে সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান এবং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বহু অমূল্য ছবি তার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
তবে আফতাব আহমেদ সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে তোলা ‘জাল পড়া বাসন্তি’র ছবি তুলে। লালমনিরহাটের চিলমারির বন্দরে বাসিন্দা বাসন্তির অর্থাভাবে শরীরে জাল জড়িয়ে রাখা ছবি সেসময় বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।