| বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট
মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহতম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি)। তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে দুই-তিনদিন আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। টানা তিন-চারদিন থাকার জন্য হাতে-মাথায় করে সঙ্গে আনছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কনকনে শীত উপেক্ষা করে সব বয়সী মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে পৌঁছে গেছেন কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ।
ইজতেমা আয়োজকরা জানান, এবার দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিদের সুবিধার জন্য ইজতেমা ময়দান ৯২টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। মুসল্লি বেশি হয়ে গেলে তাদের জন্য আরও পাঁচটি খিত্তা রিজার্ভ রাখা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জুবায়েরপন্থি মুসল্লিরা অংশ নেবেন। ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। পরে, চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব, শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি। দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দপন্থিরা অংশ নেবেন।
ইজতেমার প্রথম পর্বে মুসুল্লিরা যেসব খিত্তায় থাকবেন সেগুলো হচ্ছে- ১ নম্বর খিত্তায় গাজীপুর, ২ নম্বর খিত্তায় টঙ্গী-১, ৩ নম্বর খিত্তায় টঙ্গী-২, ৪ নম্বর খিত্তায় টঙ্গী-৩, ৫ নম্বর খিত্তায় মিরপুর-১, ৬ নম্বর খিত্তায় মিরপুর-২, ৭ নম্বর খিত্তায় সাভার-১, ৮ নম্বর খিত্তায় সাভার-২, ৯ নম্বর খিত্তায় মোহাম্মদপুর, ১০ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-৩, ১১ নম্বর খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-১, ১২ নম্বর খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-২, ১৩ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-১, ১৪ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-২, ১৫ (ক) খিত্তায় ডেমরা, ১৫ (খ) নম্বর খিত্তা (সংরক্ষিত খিত্তা), ১৬ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-৪, ১৭ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-৫, ১৮ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-৬, ১৯ নম্বর খিত্তায় কাকরাইল-৭, ২০ নম্বর খিত্তায় রাজশাহী, ২১ নম্বর খিত্তায় নওগাঁ, ২২ নম্বর খিত্তায় নাটোর, ২৩ নম্বর খিত্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২৪ নম্বর খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-২, ২৫ নম্বর খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-১, ২৬ নম্বর খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ২৭ নম্বর খিত্তায় দোহার, ২৮ নম্বর খিত্তায় নবাবগঞ্জ, ২৯ নম্বর খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ৩০ নম্বর খিত্তায় টাঙ্গাইল, ৩১ নম্বর খিত্তায় নড়াইল, ৩২ নম্বর খিত্তায় ধামরাই, ৩৩ নম্বর খিত্তায় রংপুর, ৩৪ নম্বর খিত্তায় নীলফামারী, ৩৫ নম্বর খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ৩৬ নম্বর খিত্তায় লালমনিরহাট, ৩৭ নম্বর খিত্তায় গাইবান্ধা, ৩৮ নম্বর খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ৩৯ নম্বর খিত্তায় মাগুরা, ৪০ নম্বর খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৪১ নম্বর খিত্তায় বগুড়া, ৪২ নম্বর খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ, ৪৩ নম্বর খিত্তায় ফরিদপুর, ৪৪ নম্বর খিত্তায় যশোর, ৪৫ নম্বর খিত্তায় সাতক্ষীরা, ৪৬ নম্বর খিত্তায় বাগেরহাট, ৪৭ নম্বর খিত্তায় নরসিংদী, ৪৮ নম্বর খিত্তায় ভোলা, ৪৯ নম্বর খিত্তায় জামালপুর, ৫০ নম্বর খিত্তায় ময়মনসিংহ-১, ৫১ নম্বর খিত্তায় ময়মনসিংহ-২, ৫২ নম্বর খিত্তায় মেহেরপুর, ৫৩ নম্বর খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৫৪ নম্বর খিত্তায় নেত্রকোনা, ৫৫ নম্বর খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ৫৬ নম্বর খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ৫৭ নম্বর খিত্তায় বরিশাল, ৫৮ নম্বর খিত্তায় রাজবাড়ি, ৫৯ নম্বর খিত্তায় শেরপুর, ৬০ নম্বর খিত্তায় শরিয়তপুর, ৬১ নম্বর খিত্তায় মাদারীপুর, ৬২ নম্বর খিত্তায় সিলেট, ৬৩ নম্বর খিত্তায় কক্সবাজার, ৬৪ নম্বর খিত্তায় রাঙ্গামাটি, ৬৫ নম্বর খিত্তায় খাগরাছড়ি, ৬৬ নম্বর খিত্তায় বান্দরবান, ৬৭ নম্বর খিত্তায় ফেনী, ৬৮ নম্বর খিত্তায় নোয়াখালী, ৬৯ নম্বর খিত্তায় লক্ষীপুর, ৭০ নম্বর খিত্তায় চাঁদপুর, ৭১ নম্বর খিত্তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৭২ নম্বর খিত্তায় খুলনা, ৭৩ নম্বর খিত্তায় পটুয়াখালী, ৭৪ নম্বর খিত্তায় বরগুনা, ৭৫ নম্বর খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৭৬ নম্বর খিত্তায় কুমিল্লা, ৭৭ নম্বর খিত্তায় পিরোজপুর, ৭৮ নম্বর খিত্তায় ঝালকাঠি, ৭৯ নম্বর খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ৮০ নম্বর খিত্তায় হবিগঞ্জ, ৮১ নম্বর খিত্তায় মৌলভীবাজার, ৮২ নম্বর খিত্তায় পাবনা, ৮৩ নম্বর খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ৮৪ নম্বর খিত্তায় পঞ্চগড়, ৮৫ নম্বর খিত্তায় দিনাজপুর, ৮৬ নম্বর খিত্তায় জয়পুরহাট এবং ৮৭ নম্বর খিত্তায় কুষ্টিয়া। ৮৮ নম্বর থেকে ৯২ নম্বর খিত্তা সংরক্ষিত থাকবে।
মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দান ৯২টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এবার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৮৭টি খিত্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচটি খিত্ত সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কোনো জেলার মুসল্লি বেশি হলে অথবা মাদ্রাসা ছাত্রদের ওই সংরক্ষিত খিত্তাগুলো দেওয়া হবে। ইজতেমায় দেশের মুসল্লিদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও অংশ নেবেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নিবাস তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য গরম পানি, রান্নার জন্য গ্যাস, উন্নত টয়লেটসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। পুরো ময়দান সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এবছর ইজতেমার প্রথম পর্বে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি যোগ দেবেন। এজন্য সারাদেশে ব্যাপক দাওয়াতি কাজ করা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে গাজীপুরে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা। বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে করে এসব মুসল্লি টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগআলী, উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় নেমে হেঁটে ময়দানে এসে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একপশলা হালকা বৃষ্টি হয়ে যায় টঙ্গীতে। এতে মুসল্লিরা কিছুটা সমস্যায় পড়েন। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এবার যে সব মুসল্লি ময়দানে তাদের খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন তাদের প্রায় সবাই বৃষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে পলিথিন-কাগজ সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ময়দানে চটের নিচে অবস্থান নেয়া মুসল্লিরা দুর্ভোগে পড়বেন। বিশেষ করে খোলা আকাশের নিচে রান্না-বান্না এবং খিত্তায় অবস্থান করাও কঠিন হয়ে যাবে।
এদিকে এবার পুরো ইজতেমা ময়দান এলইডি লাইট দিয়ে সজ্জিত করেছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। শেষ মুহূর্তে মুসল্লিদের যাতায়তের পথগুলো মেরামত, ময়দান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের সুবিধার সার্বিক দিক ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত থেকে দেখভাল করছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম।
অপরদিকে ইজতেমা ময়দানের পাশে বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্পগুলো বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে। পুরো ইজতেমা ময়দানের চারপাশে সিসি ক্যামেরাগুলো সচল করা হয়েছে। মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইন শৃঙ্খখলা বাহিনীর সদস্যরা।
টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯৬৩ সাল থেকে। এবারের ইজতেমা হবে ৫৫তম। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা এক পর্বে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এই ইজতেমায় অংশ নেন বলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিনদিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হয়।
Posted ১২:১৯ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain