রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যুদ্ধ অপরাধী নন; আওয়ামীলীগ নয় বরং জামায়াতে ইসলামীরাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক

  |   শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

 রাকেশ রহমান

Rakes

আমি একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। শুধু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই নয় বরং রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। যে পরিবারের সৎ, আদর্শ ও প্রতিবাদের জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতেও পরিচিতি রয়েছে। যাক আমি আমার ব্যাপক পরিচিতি উল্লেখ করতে আগ্রহী নই।

উপরের এই উক্তি গুলো আমার জীবনে বাস্তব পরীক্ষিত। যেহেতু আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তাই ছেলে বেলা থেকেই বেরে উঠার পাশাপাশি বাবা চাচাদের যুদ্ধের সময়কার গল্প বেশি বেশি শুনতাম। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা, ছবি সংগ্রহ করা ও দেশাত্ববধক গান  প্রচুর পরিমাণে শুনতাম। ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা, বিভিন্ন লেখকের বই পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে পড়তাম। মনে প্রানে হ্বদয়ে জায়গা দিয়েছিলাম একটি নাম ‘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’ । ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটা মুখস্থ ছিল। যেহেতু আমার পরিবারের সাথে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সাথে একটা সুমুধুর সম্পর্ক ছিল সেই সুবাদে সুযোগ পেলেই যেতাম তাঁর বাসায়।

একবার তো এক মজার ঘটনা ঘটলো, তখন আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে স্কুলের হাফ টাইম-এ  পেট খারাপের কথা বলে হেড মাষ্টারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে ছোট ফুফির সাথে ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে  বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে গেলাম, গিয়েই তো খেলাম ধরা দেখি আমার হেড মাষ্টার ( অধ্যক্ষ মৃত কামরুজ্জামান, সাবেক আওয়ামীলীগ এম পি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ) ঐখানে বসা। স্যার আমাকে দেখা মাত্র মৃদু হাসলেন এবং বুঝে গেলেন আমার ছোট হ্বদয়ে শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা।

আমাদের বাসায় শেখ মুজিবর রহমানের যে বিশাল বিশাল ছবি ছিল তা আমার মনে হয় সারা বাংলাদেশে এত বড় এবং এতো ছবি কারো বাসায় ছিল না। যার কারণে শুধু মাত্র শেখ হাসিনার মিশিলে এই ছবিগুলো নিয়ে যাওয়া হতো, আমরাও শেখ হাসিনার পাশেই থাকতাম। মুক্তিযুদ্ধের একটি সর্ট ফিল্ম আছে নাম ৭১’এর যীশু। এই ছবিটি অতুলনীয়।

আমার ধারনা আমার মত খুব কম যুবকই আছে যারা ৭১’এর ইতিহাস এতো বেশি পড়েছে বা জেনেছ । এখনকার তরুণ সমাজ ইতিহাস সঠিক ভাবে না পড়ে না জেনে, শুনে শুনে তর্ক করে যুক্তি, ভিত্তি জ্ঞান ছাড়া।

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমি আমার মাথায় রাখি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অনুভূতি আমি  আমার হ্বদয়ে রাখি ঠিক যেন ৭১’এর একজন মুক্তিসেনার মত। শেখ মুজিবরের প্রতি অন্ধের মত পাগল ছিলাম যে , শেখ মুজিবরের কণ্ঠের সাথে ঢাকার সাবেক মেয়র ও সাবেক ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মৃত মেয়র হানিফের কণ্ঠের সাথে খুব মিল ছিল। তাই মেয়র হানিফের কণ্ঠের ভাষণ শুনার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে থাকতাম।

কিন্তু ১৯৯৭ সালে আমার প্রিয় চাচা মুক্তিযোদ্ধা মৃত মতিউর রহমান রেন্টুর ( ‘আমার ফাঁসি চাই’- এর লেখক) – এর সাথে শেখ হাসিনা যে অনৈতিক ব্যবহার করেছে তার পর থেকে একটা অনীহা জন্মায় আওয়ামীলীগের প্রতি। সেই অনীহা থেকেই নতুন করে আবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করি। শুরু করতে না করতেই জানতে পারলাম যে ৭ই মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবর রহমান ছিলে শুধু মাত্র একজন জ্বালাময় পাঠক, তখন প্রশ্ন জাগল এর রচয়তা কে? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী। এরপর ধীরে ধীরে ইতিহাস বলতে শুরু করলো শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, তিনি তাঁর ব্যাক্তিগত স্বার্থের জন্য কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশে জনগণের আবেগ, ভালোবাসা। শেষ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষায় ছিলেন এবং আশায় ছিলেন ক্ষমতা তাঁর হাতে হস্তান্তর করা হবে। উনি যদি একবারের জন্যও বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইতেন এবং ৭ই মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে এক মাসও লাগতো না বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হতে। এই মর্মে আজ স্পষ্ট বোঝা যায় শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন।

সুতরাং এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভারতী গোলামীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-ও ঐ সময় স্বাধীনতার পক্ষে সম্মতি দেননি। কি কি কারণে  দেয়নি? কিন্তু কেন? একবারও কি আমরা হাতিয়ে বা গবেষণা করে দেখেছি? কারন গুলো কি কি? দেখিনি বা দেখতেও চাইনি। হয়তো; ঐ কারন গুলো বোঝার মতো জ্ঞান আমাদের নেই। আর যারা বুঝেছেন বা জানতেন তারা প্রকাশ বা ব্যাখ্যা করলে বের হয়ে আসত বা আসবে যে জামায়াতে ইসলামীরা স্বাধীনতার বিরোধী নয় বরং দেশ প্রেম থেকেই দেশের ও জাতির মঙ্গলেই তারা ৭১’এর স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো।

শুধু কি জামায়াতে ইসলামী? আমাদের বাংলার প্রথম স্তম্ভ শেরে বাংলা এ কে ফজরুল হকের পর দ্বিতীয় স্তম্ভ যিনি মৌওলানা ভাসানী তিনিও চাননি ভারতীয় গোলামী।

একজন ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য আমরা লাখো রক্তের বিনিময়ে ,ত্যাগ স্বীকার করে, এতো কিছু পর আমরা স্বাধীন একটা দেশ পেয়েও পরাধীনতার শিকলে আটকা পরলাম যার মাশুল এখনও দিতে হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীকে আমি চরম পরম ঘৃণা করতাম। দেশে থাকতে একবার আমার এলাকায় আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব এসেছিলেন ওয়াজ করতে। কিন্তু আমি তার কথা না শুনে বাড়িতে বসে সারা রাত হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনেছিলাম যাতে মাইকের শব্দ আমার কানে না আসে। যাইহোক আমি উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া কোন নাস্তিক বুদ্ধিজীবী নয়। কিন্তু ন্যূনতম জ্ঞান চিন্তা চেতনায় সুদূর প্রসারিত আমার মন মানসিকতা।

২০০৬-এর পরে ইতালিতে এসে আমি ইসলামিক ফরাম অফ ইউরোপের একজন দায়িত্বশীল ভাই মির্জা জামাল বেগ সাহেবের কাছ থেকে আমি দ্বীন ইসলামের দাওয়াত পাই। ধীরে ধীরে তার মাধ্যমে আমি ডঃ জাকির নায়েকের ওয়াজ শুনা শুরু করি এবং দরসে কোরআন ও ইসলামী ইতিহাস পড়া শুরু করি। তারপরে তার দেশের বাড়ি পিরোজপুর (সাইদী সাহেবের এলাকা) হওয়ায় সে এবং আরেক দায়িত্বশীল জনাব এমদাদুল হক সাহেবের প্রচেষ্টায় আমি বিরক্ত হওয়া স্বত্তেও আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের জীবনী জানতে সক্ষম হই।  এরপরও আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে দেশে পিরোজপুরে লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিলাম। কি আশ্চর্য ! একেবারে নিরপরাধ একজন এলেমকে শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য এই ভাবে যুদ্ধ অপরাধী রাজাকার নারী ধর্ষণকারী হিসেবে সাজানো হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে; এ আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি।

এ আমরা কোন জাতি যারা শুধু মাত্র হলুদ মিডিয়া প্রচার মাধ্যম দ্বারা একজনকে দেবতা বানিয়ে পূজা দিচ্ছি আর এলেম লোকদেরকে বানাচ্ছি যুদ্ধ অপরাধী ,রাজকার, নারী ধর্ষণকারী , জঙ্গি ইত্যাদি। তারপর থেকে আমি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের প্রত্যেকটি ওয়াজ দেখেছি, শুনেছি, কেঁদেছি, শিখেছি এবং জেনেছি ইসলাম কি। হাতে গুনা দুই একটা ছাড়া কোথাও কোন জায়গায় রাজনৈতিক বক্তব্য উনি দেননি । আমি একজন ঈমানদার মুসলমান। তাই আল্লাহ্‌র উপর রয়েছে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সে বিশ্বাসেই বলতে পারি যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যদি মন্দ লোক হতেন তাহলে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তাঁকে এতো বড় ক্ষমতা তথা তাঁর কণ্ঠে যে ম্যাজিক পাওয়ার আছে সেটা দিতেন না। সাঈদী সাহেব সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে ক্বাবা শরীফের ভিতরে ঢুকার সুযোগ পান, সেই ওয়াজও আমি দেখেছি। ক্বাবা শরীফের ভিতরে ঢুকার অনুভূতিতে সাঈদী সাহেব সারা রাত ঘুমাতে পারেন নি আল্লাহ্‌র শুকুরে সেজদায় পড়েছিলেন। তাঁর হাতে দেশ বিদেশে বহু বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। আল্লাহ্‌র প্রতি আমার ঈমানী দাবীতে বলতে পারি রাব্বুল আলামিন কোন দিন মন্দ মানুষকে এতো বড় সম্মানে সম্মানিত করবেন না ।

আর বিধর্মী , নাস্তিকদের বলতে চাই সঠিক সাক্ষী প্রমাণ আইনের ভিক্তিতে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের নিরপেক্ষ বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। না হলে কোটি জনতা তোমাদের ছাড়বে না।

জামায়াতে ইসলামীরা বাংলাদেশে মঙ্গল কামনার রাজনীতি করে তা দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমের দিকে লক্ষ করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে তারাই প্রকৃত শিক্ষিত, মার্জিত , সৎ , আদর্শবান দেশ প্রেমিক ; শুধু মাত্র হলুদ মিডিয়ার মিথ্যা প্রচার ছাড়া।

লেখক :  – রাকেশ রহমান (প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক,বাংলাদেশ সত্যের শক্তি; লেখক, তরুণ রাজনীতিবিদ) 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৪৪ | শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com