| বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কথিত সর্বদলীয় সরকারে যোগদান এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা-কর্মীদের ভেতরে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। আর এরশাদের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে নতুন করে ভাঙনের মুখে পরতে যাচ্ছে দলটি। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দলের প্রধান এইচ এম এরশাদের আকস্মিক এই অবস্থান পরিবর্তনে জাপার নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ যেমন হয়েছে অবাক ও তেমনি ভাবে হয়েছে ক্ষুব্ধ। আর এর জেরেই বিক্ষুব্ধ অন্তত ৫০ জন কেন্দ্রীয় নেতা ইতিমধ্যে দল ছাড়তে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
বিক্ষুব্ধ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, জাপার ঘোষিত অবস্থান ছিল সরকারের বিপক্ষে। দলের চেয়ারম্যান নিজেও মনে করতেন হাসিনার প্রস্তাবিত এই ‘সর্বদলীয় সরকার’ অসাংবিধানিক। গত কয়েক মাস ধরেই সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া একতরফা নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছিলেন এরশাদ। বিশেষ করে দলীয় নীতিনির্ধারকদের সভায় অনেকবারই এই নিয়ে আলোচনা হয় েবং প্রত্যেকারই তিনি সরকারের বিপক্ষে তার অবস্থানের কথা বলেছিলেন। এরশাদ নিজে প্রকাশ্যে অনেকবার এই অবস্থানের কথা দেশবাসীকে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে আকস্মিক ‘সর্বদলীয়’ মন্ত্রিসভায় জাপার যোগদান এবং ‘একতরফা’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন তিনি। এই অবস্থায় বিক্ষুব্ধ নেতারা নিজেদের অবস্থান প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাংসদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব এবং কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে তারা তাদের অবস্থান প্রকাশ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলের বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতাই।
দলের একটি মহল মনে করেন, গত পাঁচ বছরে মহাজোট সরকারের কাছে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া অংশটি এরশাদের বর্তমান অবস্থানের জন্য দায়ী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কাজী জাফর আহমদ, কাজী ফিরোজ রশীদ সহ নেতাদের একটি বড় অংশ জাপাকে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধানোর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে এরশাদেরও সম্মতি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এরশাদের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা এ অংশটিকে হতাশ করেছে। তাই বিক্ষুব্ধ অংশটি এখন বিকল্প চিন্তা করছে।
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ফিরোজ রশিদ। সর্বদলীয় সরকারে জাতীয় পার্টির যোগদান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রহমত করেছে মন্ত্রীর তালিকায় আমার নাম নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হসপিটালে আছেন। তিনি বলেন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন ঊর্ধ্বতন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। বুঝতেও পারছেন না, জাপার সাংগঠনিক কোন পর্যায়ে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
ঢাকা মহানগরের দক্ষিণাঞ্চলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জাতীয় পার্টি সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ায় দলের মহাজোটবিরোধী অংশটি কোণঠাসা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এরশাদের নির্দেশেই দলের মহাজোটবিরোধী দুই নেতা বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন। সর্বদলীয় সরকারে মন্ত্রিত্ব পেয়ে তাদের কেউ আর নেই।’ এ নেতা জানান, বিএনপির কাছে ৬০টি আসন চেয়েছিল জাতীয় পার্টি। বিএনপি আগাম ওয়াদা না দিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে শামিল হতে বললে জাতীয় পার্টি পিছু হটে। তিনি বলেন, মহাজোটবিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়া এক নেতা সহসাই বহিষ্কৃত হতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার পাঁচজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ ‘দালাল’ ও ‘বেইমান’ বলবে, মুখে ‘থুতু দেবে’—এ ধরনের কথা বলার পর হঠাৎ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণার জন্য জাপার নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন না। বিশেষ করে, দুই বছর ধরে অত্যন্ত তির্যক ভাষায় এরশাদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সীমাহীন দুর্নীতি’ ও ‘অপশাসনের’ সমালোচনা করেছেন। এর পরও আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য সহযোগী শক্তি হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা জাপার নেতা-কর্মীদের হতবাক করেছে।
জাপার সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, মহাজোট সরকারে জাপার মন্ত্রী ছিলেন একজন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে একই দিন শেখ হাসিনা সরকারের অধীন ‘সর্বদলীয় সরকারে’ জাপার সাতজন নেতা অংশ নিয়েছেন। এ ঘটনাকে জনগণের সঙ্গে ‘চরম মশকরা’ বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।
দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলেও এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। তাদের মতে আগে থেকেই জাতীয় পার্টিতে দুটি ধারা ছিন। এরশাদের এই হটাৎ ঘোষনায় সেই দুই ধারাই এখন মুখোমুখি অবস্থানে। এ অবস্থায় দলে আরেকটা ভাংগন আসন্ন বলেই মনে করছেন অনেকে।
Posted ০০:৩৯ | বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin