রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের গুলি-মারধরের অভিযোগ

  |   সোমবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৮ | প্রিন্ট

আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের গুলি-মারধরের অভিযোগ

স্বাধীনদেশ অনলাইন :  কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে ছাত্রলীগ গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, গতকাল রোববার দিবাগত রাত ও আজ সোমবার ভোরে এই গুলি ছোড়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ধাওয়া দেয় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় প্রথম দফায় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ গুলি ছোড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সোমাবার সকাল ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি টিএসসি হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে কার্জন হলের দিকে যায়। কার্জন হল হয়ে মিছিলটি শহীদুল্লাহ হলের ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মারধর করেন। এতে কয়েকজন আহত হন।

একপর্যায়ে আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেন। তারা পিছু হটে। এ সময় ছাত্রলীগের মিছিল থেকে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয়। মিছিলে থাকা বেশির ভাগই ঢাকা কলেজসহ শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বহিরাগত বলেও তারা জানান।

ছাত্রলীগকে ধাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বেরিয়ে দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থান নেন। গুলির ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। রাতভর আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জবাব চান তাঁরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল রোববার রাত আটটা থেকে পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। রাতে উপাচার্যের বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা।

 

রাতভর সংঘাত

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের শাহবাগ থেকে পুলিশ পিটিয়ে তুলে দেওয়ার পর উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর রোববার রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের উঠিয়ে দেয় ‍পুলিশ। তখন অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাদের উপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

শাহবাগ ছাড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় রাতে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ চলছিল; পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এই সংঘাত রাত পৌনে ২টা নাগাদও চলছিল। বিক্ষোভ থেকে অনেককে আটক করতে দেখা যায় পুলিশকে, তবে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। রাত দেড়টার পর আন্দোলনরত একদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাড়ির ফটক ভেঙে ঢুকে বিভিন্ন আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগে নেতারা হলগুলোতে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে, কাউকে বের হতে দিচ্ছে না।

টিএসসি এলাকায় ছাত্রদের বিক্ষোভের মধ্যেই রাতে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা হাই কোর্ট-বঙ্গবাজার সড়কে নেমে আসে; মিছিল নিয়ে নামে কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরাও। পুলিশের রাবার ‍বুলেটে বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বঙ্গবন্ধু হলের আবু বকর সিদ্দিককে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চোখের কোনে জখম হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজনকে রাবার বুলেটের আঘাত নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

লাঠিপেটায়ও আহত হন অর্ধ শতাধিক আন্দোলনকারী। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটে তিনজন পুলিশ সদস্যকেও আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিতে দেখা যায়। দুপুরে অফিস ছুটির ওই সময় শাহবাগে অবরোধের কারণে গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। ওই সময় মৎস্য ভবন, টিএসসি ও সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে শাহবাগমুখী যানবাহন ঘুরিয়ে দিচ্ছিল পুলিশ। ফলে ওই সব মোড় ঘিরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। গত ১৪ মার্চ তারা ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন।

তারপর নানা কর্মসূচি পালনের পর রোববার পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয় তারা। বেলা আড়াইটার দিকে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে তারা সমবেত হয়। ঘণ্টাখানেক পর তারা মিছিল করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে বিক্ষোভ স্তিমিত হয়ে এলেও পৌনে ১০টার দিকে আবার শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে টিএসসিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা টিএসসির দিক থেকে ইট ছুড়তে থাকলে পুলিশও রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তার জবাব দিতে থাকে।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিএসএসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সোমবার থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন। রাতে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরাও সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে রাতে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরাও সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে এরপর গভীর রাত পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছিল।

এর মধ্যে হাই কোর্ট-বঙ্গবাজার সড়কে নেমে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানায়। রাত দেড়টার দিকে দুই ছাত্রী হলের পাঁচশর বেশি ছাত্রী কলাভবনের সামনে এসে ছাত্রদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেয়।

মধ্যরাতের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ব্যপারে অবগত আছেন।প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আন্দোলনকারীদের সাথে সোমবার বসার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৩৯ | সোমবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com